আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর মঙ্গলবার শুভেচ্ছা জানালেন ১৯ বছর বয়সী দাবাড়ু দিব্যা দেশমুখকে। সদ্য জর্জিয়ার বাতুমি শহরে অনুষ্ঠিত ফিডে মহিলা ওয়ার্ল্ড কাপে ভারতের প্রথম বিজয়ী হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। সোমবার অল-ইন্ডিয়ান ফাইনালে, দিব্যা দেশমুখ কিংবদন্তি কনেরু হাম্পিকে র্যা পিড টাইব্রেকারে ১.৫–০.৫ স্কোরে হারিয়ে এই ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেন। এই জয়ে গোটা দাবা বিশ্বকে চমকে দেন দিব্যা এবং ভারতের প্রথম মহিলা ফিডে ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। দিব্যার এই জয়ে শচীন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে লেখেন, ‘একটি অল-ইন্ডিয়ান ফাইনাল, একটি ঐতিহাসিক জয়। অভিনন্দন দিব্যা দেশমুখ, ভারতের প্রথম মহিলা ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন এবং নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার। কনেরু হাম্পিকেও গতকালের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের জন্য পূর্ণ কৃতিত্ব’।
উল্লেখ্য, কোনেরু হাম্পি যেবছর গ্র্যান্ড মাস্টার হন, তার তিন বছর পরে দিব্যার জন্ম হয়। তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতার লড়াই ছিল টানটান। রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া ফাইনাল জিতে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না দিব্যা। কোনেরু হাম্পির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার পরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। চোখ থেকে ঝরঝর করে বেরিয়ে এল আনন্দাশ্রু। ছুটে গেলেন তাঁর মায়ের কাছে। মেয়ের এই লড়াইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জর্জিয়ার বাতুমিতে ছিলেন মা। মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। মায়ের বাহুলগ্না হওয়ার পরেও মেয়ের চোখ দিয়ে নেমে আসে অশ্রু। এদিকে দিব্যা দেশমুখ দাবার নতুন রানি। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসতে থাকে অভিনন্দন বার্তা। তবুও দিব্যা মায়ের সঙ্গ ত্যাগ করেননি। প্রথম মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে দিব্যা জিতে নিলেন মহিলাদের ফিডে চেস বিশ্বকাপ। সোমবার টাইব্রেকারে দ্বিতীয় র্যাযপিড গেমে জয় পান তিনি। নাগপুরের মেয়ে দিব্যা। তাঁর মা-বাবা দু'জনেই চিকিৎসক। দিব্যার বড় দিদি ব্যাডমিন্টন খেলেন।
দিব্যা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ''আমার দিদি ব্যাডমিন্টন ক্লাসে যেত। একদিন আমার মা-বাবাও আমাকে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে আমার বয়স ছিল চার-পাঁচ। ব্যাডমিন্টন নেটের নাগাল পাচ্ছিলাম না। ওই একই বিল্ডিংয়ে দাবা শেখানো হত। আমার মা-বাবা আমাকে দাবায় ভর্তি করে দেন।'' এই ঘটনা না ঘটলে আজকের দিব্যা দেশমুখকে দেশ পেত কিনা কে জানে! শনি ও রবি অনুষ্ঠিত হয় দুটি ক্লাসিক্যাল গেম। দুটি ম্যাচই ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। সেই টাইব্রেকার জিতে দিব্যা ছড়িয়ে দিলেন দীপ্তি। কোনেরু হাম্পির বয়স ৩৮। আর দিব্যার ১৯। তরুণীর সম্বল ছিল আগ্রাসী মনোভাব। তার জোরেই দিব্যা জিতলেন। ২০২০ সালে ফিডে অনলাইন অলিম্পিয়াডে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন দিব্যা। ২০২২ সালে মহিলাদের উওমেন্স ইন্ডিয়া চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন তিনি। একই ইভেন্টে ২০২২ সালে ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ পান। এত বড় সাফল্যের দিন আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন না দিব্যা। তিনি বরং নিজের লক্ষ্যটা স্থির করে রাখছেন। শতরঞ্জ কে খিলাড়ি হওয়ার পরে দিব্যাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই সাফল্য আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। তবে এখনও অনেক কিছু জেতার আছে। বলা যেতে পারে এটাই শুরু’।
