আজকাল ওয়েবডেস্ক: একেই বলে দাম্পত্য। স্বামী বিশেষভাবে সক্ষম। হাঁটতে পারেন না। পঙ্গু স্বামীকে কাঁধে তুলে তীর্থযাত্রায় গেলেন স্ত্রী। তাও আবার কিছু পথ নয়। একেবারে ১৫০ কিমি পথ স্বামীকে কাঁধে চাপিয়ে পাড় করলেন তরুণী। কানওয়ার যাত্রায় এহেন দৃশ্যের মুহূর্ত প্রকাশ্যে আসতেই নেটিজেনদের চোখে জল। দাম্পত্যের এমন নজিরে সকলেই রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গেছেন। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের মোদিনগরের বাখারওয়া গ্রামের বাসিন্দা আশা ও শচিন। গতবছর স্পাইনাল কর্ড সার্জারি পর থেকে আর হাঁটাচলা করতে পারেন না শচিন। শয্যাশায়ী থাকেন। দিন কয়েক আগে হরিদ্বার থেকে মোদিনগর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে কানওয়ার যাত্রা শুরু করেন আশা। তাঁর কাঁধে ছিলেন স্বামী শচিন। আর সঙ্গী তাঁদের দুই সন্তান। জানা গেছে, গত ১৩ বছর ধরে কানওয়ার যাত্রায় অংশ নেন শচিন। কিন্তু শয্যাশায়ী হতেই তিনি আর যেতে পারেন না। অবশেষে স্ত্রী আশাই স্বামীর ইচ্ছে পূরণ করলেন। 

 

আশা ও শচিনের কানওয়ার যাত্রার ভিডিওটি ইতিমধ্যেই হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কয়েক লক্ষ মানুষ ভিডিওটি দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে গেছেন‌। একজন লিখেছেন, 'মহাদেবের আশীর্বাদ থাকলেই অসম্ভব ঘটনাও সম্ভব হয়। এটি পুরোপুরিই ঈশ্বরের কৃপা।' একজন লিখেছেন, 'আপনি এই দুনিয়ার অন্যতম ভাগ্যবান পুরুষ। এমন স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ঈশ্বরের কৃপা দৃষ্টি রয়েছে আপনাদের উপর।' 

 

আবার একজন লিখেছেন, 'দাম্পত্যের এমন নজির বিরল। ১৫০ কিমি পথ মুখের কথা নয়। স্বামীকে কাঁধে বয়ে নিয়ে যেতেও কোনও ক্লান্তি নেই স্ত্রীর। এমন ঘটনা সিনেমায় দেখা যায়।' একজন লিখেছেন, 'আমরা মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে আপনাদের মনোকামনা পূরণ হয়। হর হর মহাদেব।' 

 

প্রসঙ্গত, কানওয়ার যাত্রায় প্রতি বছর লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়। গঙ্গা এবং অন্যান্য পবিত্র নদী থেকে শিব মন্দিরে জল নিয়ে যান। গত কয়েক বছরের মতো এবছরও এই তীর্থযাত্রা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীরা পথে নেমেছেন। 

 

আরও পড়ুন: ননদ-বৌদির চুলোচুলি, অশান্তিতে ঝালাপালা হয়ে সকলের খাবারে বিষ মেশাল বধূ, পরিণতি যা হল

 

কানওয়ার যাত্রা হল এক তীর্থযাত্রা যা হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শ্রাবণ মাসে (সাবন)-এ অনুষ্ঠিত হয়। গেরুয়া বসন পরিহিত ভক্তরা বিভিন্ন শিব মন্দিরে জলের কলসি নিয়ে খালি পায়ে হেঁটে যান। অনেক জায়গায় ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহনে চেপে যাতায়াত করেন তীর্থযাত্রীরা। গাঙ্গেয় সমভূমিতে, উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, গোমুখ এবং গঙ্গোত্রী, বিহারের সুলতানগঞ্জ এবং উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ, অযোধ্যা বা বারাণসীর মতো তীর্থস্থানে জল ঢালা হয়। 

 

তীর্থযাত্রীরা তাঁদের কাঁধে বাঁকে চাপিয়ে পবিত্র জলের কলসি বহন করেন। ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ-সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরে বা মিরাটের পুরো মহাদেব এবং অঘোরনাথ মন্দির, বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধামের মতো নির্দিষ্ট মন্দিরগুলোতে তীর্থযাত্রীরা শিব লিঙ্গের পূজা করতে জল ব্যবহার করেন। 

 

এমনকী, ভক্তরা নিজের গ্রামে বা শহরেও শিবমন্দিরে গিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালেন। গঙ্গার আশেপাশের এলাকায় এই শিব পূজার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। উত্তর ভারতের কানওয়ার যাত্রার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব রয়েছে। যাকে 'কাভাদি' বলা হয়। পালিত হয় তামিলনাড়ুতে। সেখানে আবার ভগবান মুরুগানকে পূজা করা হয়।