আজকাল ওয়েবডেস্ক: এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিমের (ইপিএস-৯৫) অধীনে ন্যূনতম পেনশন ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭,৫০০ টাকা করা এবং মহার্ঘ ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের দাবি এখনও অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে গত ১৫ই ডিসেম্বর লোকসভায় ইপিএস-এর ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধি এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পেনশন নির্ধারণ বাস্তবায়নে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
ইপিএস তহবিল কীভাবে কাজ করে?
শ্রম মন্ত্রক ব্যাখ্যা করেছে যে ইপিএস-৯৫ তহবিল প্রধানত নিয়োগকর্তা এবং সরকারের অবদানের মাধ্যমে গঠিত হয়। নিয়োগকর্তারা বেতনের ৮.৩৩ শতাংশ অবদান রাখেন, এছাড়া কেন্দ্র প্রতি মাসে কর্মচারীর বেতনের ১.১৬ শতাংশ প্রদান করে। এই সংগৃহীত তহবিল থেকেই সমস্ত পেনশন প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, কর্মচারীর বেতনের বেসিক পরিমাণ ১৫,০০০ টাকা সীমা পর্যন্ত হবে।
অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়:
সরকার জানিয়েছে যে পেনশন তহবিল প্রতি বছর পর্যালোচনা করা হয় এবং সর্বশেষ মূল্যায়ন অনুসারে, এটি একটি অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতিতে চলছে।
অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতি কী?
অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতি হল একটি আর্থিক বা পেনশন তহবিলের ভবিষ্যৎ দায়বদ্ধতার তুলনায় বর্তমান সম্পদ কম থাকা। অর্থাৎ, কোনও তহবিল বা পরিকল্পনার বর্তমান সম্পদের চেয়ে ভবিষ্যৎ দায়বদ্ধতা বেশি হলে অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতি দেখা দেয়। যা মূলত অ্যাকচুয়ারি বা গণনাকারীরা গাণিতিক ও পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্ণয় করেন। এটি দীর্ঘমেয়াদী একটি পূর্বাভাস, যা একটি তহবিল বা পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের আর্থিক সক্ষমতা নির্দেশ করে। কোনও কোম্পানির পেনশন তহবিলে, সদস্যদের ভবিষ্যৎ পেনশন পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে অ্যাকচুয়ারিয়াল ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যেমনটি ইপিএফ-এর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।
সরকার বলেছে, এই ঘাটতির কারণে ন্যূনতম পেনশন হঠাৎ করে বাড়ানো বা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে এটিকে যুক্ত করা কঠিন। কেন্দ্র আরও বলেছে যে, ১,০০০ টাকার ন্যূনতম পেনশন বজায় রাখার জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত বাজেটীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ইপিএস পেনশনভোগীরা কী দাবি করছেন?
ইপিএস-৯৫ পেনশনভোগীরা মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), পারিবারিক পেনশন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা-সহ প্রতি মাসে ন্যূনতম ৭,৫০০ টাকা পেনশনের দাবি করছেন। সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৭৮ লক্ষ পেনশনভোগী বার্ধক্যে আর্থিক সংকটে ভুগছেন এবং গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে এই দাবি জানিয়ে আসছেন।
বর্তমান পেনশনের পরিমাণ ব্যাখ্যা:
বর্তমানে, ইপিএস-৯৫-এর অধীনে ন্যূনতম পেনশন হল প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা। এই পরিমাণটি ২০১৪ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবং সরকার নিশ্চিত করেছিল যে কোনও পেনশনভোগী যেন এর চেয়ে কম টাকা না পান। তারপর থেকে, জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলেও এই পরিমাণটি সংশোধন করা হয়নি। সরকারি পেনশনের মতো, ইপিএস পেনশন মুদ্রাস্ফীতি বা মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে যুক্ত নয়।
এছাড়াও, একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যবেক্ষণ কমিটি ইপিএস পেনশনের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা যোগ করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছে। কমিটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, তহবিলের বর্তমান কাঠামোর অধীনে ইপিএস পেনশনকে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুক্ত করা বা মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা আর্থিকভাবে সম্ভব নয়।
এখনও কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
সরকার তার আর্থিক অবস্থান ব্যাখ্যা করলেও এবং আদালতের নির্দেশ পালনের বিষয়ে সম্মতি জানালেও, ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধি বা মহার্ঘ ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য কোনও সময়সীমা ঘোষণা করেনি।
ইপিএস-৯৫ পেনশনভোগীদের জন্য, সর্বশেষ উত্তরটি সরকারের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিলেও কোনও তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয়নি, ফলে নূন্যতম পেনশনের জন্য অপেক্ষা এখনও শেষ হয়নি।
