আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিরাট সফলতা পাওয়া গেল। আটটি সুস্থ শিশুর জন্ম হল আইভিএফ করে। এই ঘটনার জেরে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গিয়েছে লন্ডনে। তাদের মায়েদের দেহে জিনগত সমস্যা ছিল। এরপর তাদেরকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই কাজে সহায়তা করার জন্য তিনজন ব্যক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। এই তিনজনের ডিএনএ ব্যবহার করে এই আটটি শিশুর জন্ম হয়েছে।
এই আটটি শিশু বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তাদেরকে নজরে রাখা হয়েছে। আইভিএফ এতদিন ধরে শুধু নিজের সন্তানের দিকেই প্রতিটি পরিবারকে নিয়ে গিয়েছিল। তবে এবার তারা অন্য ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করে মাতৃত্বের স্বাদ দিয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন প্রতি ৫ হাজার শিশুর জন্মের পর তাদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়। সেখানে ছেলেবেলা থেকেই তাদের ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি, ডায়বেটিস, দেহের পেশি সঠিকভাবে কাজ না করার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে এখানে বিকল্প পথ দেখিয়েছে লন্ডনের এই চিকিৎসকরা।

এই আটটি শিশুর মধ্যে চারটি মেয়ে এবং চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এদের দেহে শুরু থেকেই এই তিনজন পিতার ডিএনএ কাজে লেগেছে। এই তিনজন ব্যক্তি চিকিৎসাগতভাবে নিজেদের ডিএনএ দান করে। তারপর সেটিকে সঠিকভাবে নিয়ে যাওয়া হল সেই মায়েদের দেহে। সেখান থেকেই এই শিশুদের জন্মের বিষয়টি সামনে এসেছে।
যে মহিলারা এই শিশুদের মা হয়েছেন তারা নিজের দেহ থেকে ডিম্বানু দান করেছেন। তারপর সেটিকে এই তিন ব্যক্তির দেহের ডিএনএ যুক্ত করা হয়। এরপর আর বেশি অসুবিধা হয়নি।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে প্রতি ৫০০০ টি শিশুর জন্মের মধ্যে একটি শিশু মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগে আক্রান্ত হয় যার চিকিৎসা করা যায় না এবং এর মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, ডায়াবেটিস এবং পেশি ক্ষয়ের মত লক্ষণ। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত বহুল প্রতীক্ষিত যুক্তরাজ্যের এই ট্রায়ালের ফলাফল অনুসারে, এই নতুন আইভিএফ পদ্ধতির লক্ষ্য হল সংক্রমণ রোধ করা যাতে মহিলাদের ভয় না থাকে যে তাদের খারাপ জিন সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে।

যে আট শিশুর জন্ম হয়েছে এই নতুন পদ্ধতিতে তাদের কারও মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে মিউটেশনের কারণে গুরুতর রোগ সংক্রমনের ঝুঁকিতে থাকা ৭ জন মহিলার গর্ভে এই ৮ শিশু জন্ম নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন ছেলে ও ৪ জন মেয়ে, আবার দুটি যমজ অভিন্ন শিশুও রয়েছে এদের মধ্যে। এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে প্রো-নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার যা মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
আরও পড়ুন: বাজারে আসছে সোনার নতুন ক্যারাট, মধ্যবিত্তের মুখে ফিরল চওড়া হাসি
এনএইচএস ইংল্যান্ড এবং ওয়েলকাম গ্রুপের ফান্ডিংয়ে যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়, টাইন হসপিটালস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের একটি টিম এই কৌশল উদ্ভাবন করেছে বলে জানা গিয়েছে। নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার ডগ টার্নবুল জানিয়েছেন, ‘মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ পরিবারের উপরে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। আজকের এই সাফল্য এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা আরও অনেক মহিলার জন্য নতুন আশার আলো জাগায়। এই মহিলারা এখন চাইলে এই ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ ছাড়াই শিশুর জন্ম দিতে পারেন।
সায়েন্স জার্নাল ‘নেচার’ অনুসারে জানা যাচ্ছে, এই শিশুদের গর্ভধারণ হয়েছিল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশনের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে একটি সংক্রামিত বা ত্রুটিযুক্ত মাইটোকন্ড্রিয়া কোষযুক্ত নিষিক্ত ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস ডোনার ডিম্বাণুর সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়াতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়।
