ফুলে-ফলে-পাতায় ওরাও কিন্তু জানান দেয় ভালবাসার কথা। বাড়িতে এক টুকরো সবুজ থাকলেই নিমেষে ভাল হয়ে যায় মন। বাড়তি প্রাপ্তি দূষণ থেকে মুক্তি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন এসব কিছু তো রয়েছেই। এখন ফ্ল্যাটবাড়ির দৌলতে বেশিরভাগ মানুষেরই আলাদা করে বাগান করার সুযোগ নেই। অগত্যা ভরসা ব্যালকনি কিংবা বেডরুমের কোণা, কেউ আবার ছাদে কিংবা জানালায় গাছের পরিচর্য়া করেন। তাই গত কয়েক বছরে ইন্ডোর প্ল্যান্ট কেনার হিড়িক আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ছোট্ট ফ্ল্যাট সুন্দর ভাবে সেজে উঠবে— এই ভাবনা থেকে আলো, পর্দা, আসবাবপত্রের সঙ্গে গাছও হয়ে উঠেছে সজ্জার অঙ্গ। ঘরের মধ্যে কাচের পাত্রে জল দিয়ে রাখলেই দিব্যি বাড়বে সেই সব গাছ।


•    স্পাইডার প্ল্যান্টঃ বাতাস শুদ্ধ করার জন্য পরিচিত স্নেক প্ল্যান্ট। সরু সরু পাতার এই গাছ বেশ ঝাঁকড়া হয়ে ওঠে। ড্রইং রুমের টেবিল কিংবা ঘরের এক কোণে স্নেক প্ল্যান্ট সাজিয়ে রাখলে অন্দরসজ্জার ভোল বদলে যাবে। স্পাইডার প্ল্যান্ট বেড়ে ওঠার জন্য শুধু জলই যথেষ্ট, খুব বেশি পরিচর্য়ারও প্রয়োজন নেই। 


•    লাকি ব্যাম্বুঃ ঘর সাজানো  ছাড়াও অনেকে এক প্রকার ‘শো পিস’ হিসাবেও লাকি ব্যাম্বু ঘরে রাখেন। বাস্তু এবং ফেং শ্যুই দুই মতেই বাম্বু গাছ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক। শুধু ঘর নয়, অফিসের ডেস্কেও খুব অল্প যত্নেই বড় হতে পারে এই গাছ। আসলে এই গাছে বেশি রোদ বা পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি জল দিলে তা উল্টে ক্ষতি করে। এই ইন্ডোর প্ল্যান্টও মাটি ছাড়া কেবল জলেই বাড়তে পারে।

 

আরও পড়ুনঃ মাত্র ১৫ দিনে শরীরে বন্ধ হবে ইউরিক অ্যাসিডের তাণ্ডব! রোজ সকালে এই পানীয়ই হাড় থেকে নিংড়ে নেবে ব্যথা

 

•    পোথোসঃ ঘন সবুজ নয়, সঙ্গে হলুদের মিলমিশ বাড়ায় পাতার বাহার। এই গাছের নামই পোথোস যা চলতি ভাষায় মানি প্লান্ট নামেও পরিচিত। মানি প্ল্যান্ট মূলত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন গোল্ডেন পোথোস, মার্বেল কুইন, সিলভার পোথোস ইত্যাদি। এখন বহু বাঙালি বাড়িতেই এই লতানো গাছটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মাটি ছাড়া জলেও বেঁচে থাকতে পারে এই গাছটি। ঘরের বিভিন্ন কোণে, টেবিলের উপর অথবা ঝুলন্ত টবে মানি প্ল্যান্ট রাখলে যেমন ঘরের চেহারা বদলে যায়, তেমনই বাতাসকেও করে তোলে স্বাস্থ্যকর। এক গ্লাস জলে পোথোস লাগালেও খুব সহজেই বেড়ে উঠবে। 


•    স্নেক প্ল্যান্টঃ এই গাছের জন্যও মাটি লাগে না, বেশি যত্নেরও দরকার হয় না। শুধু জলেই বেঁচে থাকতে পারে স্নেক প্ল্যান্ট। ঘরে এই গাছ রাখলে অন্দরসজ্জায় আসে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ঘরের মধ্যে বাতাস দূষণমুক্ত করতেও স্নেক প্ল্যান্ট কাজে দেয়। 


•    মনস্টেরা প্ল্যান্টঃ এই ইন্ডোর প্ল্যান্টের পাতাগুলি বেশ বড়, দেখলে মনে হবে নকশা করা। মাটিতে এই গাছ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনই শুধু জলেও বেঁচে থাকতে পারে মনস্টেরা প্ল্যান্ট। তবে জলে রাখলে এই গাছের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 


অ্যারোহেড প্ল্যান্ট বা সিঙ্গোনিয়াম: শুধু জলেই রাখতে পারবেন অ্যারোহেড প্ল্যান্ট বা সিঙ্গোনিয়াম। উজ্জ্বল সাদাটে সবুজ রঙের পাতার গঠন অনেকটা কচুপাতার মতো। ঘরের আভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষমতা রয়েছে এই গাছের। এর পাতার কাণ্ডটি একটু লম্বাটে হওয়ায় বড় জলের পাত্র ব্যবহার করা ভাল। এক্ষেত্রে লম্বাটে কাচের গ্লাস, ছোট অ্যাকুয়ারিয়ামের পাত্র বা কফি, মধু কিংবা আচারের মতো খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পর বয়ামও পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে পারেন। 

•    ফিলোডেনড্রনঃ ফিলোডেনড্রন হৃদয় আকৃতির পাতার জন্য পরিচিত। এই উদ্ভিদ কম এবং উজ্জ্বল দু’ধরনের আলো সহ্য করতে পারে। তাই খুব একটা যত্নের প্রয়োজন হয় না। ফিলোডেনড্রন মাটি ছাড়াও একটি পাত্রে জলে রাখলেও বৃদ্ধি পায়।


জলে ইন্ডোর প্ল্যান্টের যত্ন


*যে কোনও স্বচ্ছ কাচের গ্লাস, জলের পাত্র, অ্যাকুয়ারিয়াম, টেস্টটিউবেও গাছ বসাতে পারেন। তবে স্বচ্ছ কাচে ইন্ডোর প্ল্যান্ট বেড়ে উঠলে শিকড়ের সৌন্দর্য নজর কাড়ে।


*জলে গাছ বসানোর আগে ২-৩টি পর্বের পাতা পরিষ্কার করে নিন। নুড়িপাথর, পোড়ামাটির ক্লে বল বা স্রেফ ইটের খোয়াও ছোট ছোট টুকরা করে গাছের চারপাশে ঘিরে দিতে পারেন। এতে গাছটি কোনও একপাশে ঢলে না পড়ে সোজা দাঁড়িয়ে থাকবে।


*ইনডোর প্ল্যান্ট বলে ঘরের যে কোনও জায়গায় রাখা যায় বটে। তবে যেখানে উজ্জ্বল থেকে মাঝারি মানের সূর্যের আলো পৌঁছয় এমন জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন গাছগুলো সরাসরি সূর্যের আলোতে দিন।


*জলের নিচে যেন পাতা ডুবে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কয়েক দিন বাদে বাদে জলের সংস্পর্শে থাকা পাতাগুলো ছেঁটে দিতে পারেন।


*নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জল পাল্টে দিন। সপ্তাহে অন্তত দু'দিন জল পাল্টে না দিলে মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। বিশেষ করে জলে সবুজ শেওলার উপস্থিতি দেখলেই দ্রুত জল পরিবর্তন করা প্রয়োজন।