কৃশানু মজুমদার: কথায় বলে, যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। একটু ঘুরিয়ে যদি বলি, যিনি ফুটবল খেলেন, তিনি গলায় স্টেথো ঝোলানোর স্বপ্নও দেখেন। একথা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। চিকিৎসক হওয়ার প্রথম ধাপ নিট পরীক্ষা। রেলওয়ে এফসি-র ফুটবলার হরেরাম মুর্মু নিট পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুরোদমে।
একদিকে প্রাণাধিক প্রিয় ফুটবল। অন্যদিকে ডাক্তারি ও প্যারা মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি। দুটোই একই সঙ্গে সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন হরেরাম। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে অবস্থিত গিতিংলহর গ্রামে হরেরামের বাড়ি। তাঁর নতুন ঠিকানা এখন রেলওয়ে এফসি। ট্রায়াল দিয়ে তিনি রেলওয়ে এফসি-তে সুযোগ পেয়েছেন। কলকাতা লিগে ২১ জনের দলে রয়েছেন। রেলওয়ে এফসি-র কোচরা তাঁর মধ্যে সম্ভাবনা দেখছেন। আশা করছেন ২১ থেকে তিনি প্রথম একাদশে খুব শীঘ্রই ঢুকে পড়বেন। দ্রুতই লিগে রেলওয়ের জার্সিতে নেমে পড়়বেন।

প্র্যাকটিসে ঘাম ঝরানোর পাশাপাশি পড়াশোনা ঝালিয়ে নিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একা একা উঠে আসা এক ফুটবলারের লড়াই প্রেরণা জোগায়। আজকাল ডট ইন-কে হরেরাম বলছিলেন, ''আগে দু'বার নিট পরীক্ষায় বসেছিলাম। গতবছর প্যারা মেডিক্যালে কোয়ালিফাই করেছিলাম। কিন্তু ভর্তি আর হইনি।''
আরও পড়ুন: প্রতি তিন দিনে মেসি একটা করে রেকর্ড ভাঙছে, বড় মন্তব্য করলেন মায়ামি কোচ মাসচেরানো
সুযোগ যাতে আর হাতছাড়া না হয়, তার জন্য অনুশীলন, কলকাতা লিগের ফাঁকেই তিনি ইউটিউব দেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দিনে ঘণ্টা চারেক পড়াশোনা করেন। হরেরাম বলছেন, ''কখনও কখনও প্র্যাকটিস করে এসে ক্লান্ত লাগে। তখন আর পড়া হয় না। নইলে ঘণ্টা তিন-চারেক আমি পড়ি। পড়তে আমার ভালই লাগে। পড়ার সময় আরও বাড়াতে হবে।''
স্টপার পজিশনের খেলোয়াড় তিনি। জাতীয় দলের রক্ষণের স্তম্ভ সন্দেশ ঝিঙ্গান তাঁর পছন্দের খেলোয়াড়। রাইট ব্যাক পজিশনেও তিনি খেলতে পারেন। অনুশীলনে খুবই সিরিয়াস।
হরেরামের দাদা বিরসা এমবিবিএস-এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দাদাকেই কি তিনি জীবনের ধ্রুবতারা করে এগোচ্ছেন? রেলওয়ে এফসি-র স্টপার বলছেন, ''সেটা কিছুটা রয়েছে বটে। তবে আমার নিজেরই ঝোঁক বেশি।''
পুরুলিয়ার বারী গ্রামে বিবেকানন্দ অ্যাকাডেমি। সেখান থেকেই হরেরামের কলকাতায় আসা। এখন জনাইয়ে প্রীতম কোটাল অ্যাকাডেমিতে থেকেই কলকাতা লিগ খেলছেন হরেরাম।
হাতের তালুর মতো তাঁকে চেনেন বিবেকানন্দ অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট ডক্টর প্রশান্ত মাহাতো। তিনি বলছিলেন, ''লকডাউনের সময়ে বোকারো থেকে সাইকেল চালিয়ে চলে এসেছিল। একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। আমাদের ক্য়াম্পেই খেলত। দু'বছর খেলাধুলো না করে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী বছর হরেরাম ডাক্তারি ও প্যারা মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে।''
সর্বভারতীয় স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বেশ ভাল প্রস্তুতি নিতে হয়। কোনও কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থেকে বা শিক্ষক রেখে পড়াশোনা করে থাকেন অনেকে। কিন্তু সেই আর্থিক সুবিধা নেই হরেরামের। তিনি যে নিজেই নিজের শিক্ষক। চোখে ভিড় জমায় স্বপ্ন।
মতি নন্দীর কালজয়ী উপন্যাস ‘স্টপারে’ কমল গুহ-কে তাঁর গুরু পল্টুদা বলেছিলেন, ''ব্যালেন্স, কমল, ব্যালেন্স কখনও হারাসনি।'' রক্ষণের খেলোয়াড়দের এই ব্যালেন্সই তো সম্বল। ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললে প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার ফাঁকি দিয়ে গোল করে চলে যাবেন।
একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে ফুটবল--হরেরামও তাঁর জীবনে ব্যালেন্স হারাতে চান না। স্বপ্ন চোখে নিয়ে বলেন, ''পরীক্ষায় ভাল র্যাঙ্ক করলে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভাল কলেজ পাব। ফুটবল আর পড়াশোনা তখন দুটোই চালিয়ে যাব একসঙ্গে।''
আরও পড়ুন: সব ফরম্যাটে কোহলিই সেরা, বিরাট মন্তব্য করলেন বন্ধু উইলিয়ামসন, ফ্যাব ফোর নিয়ে বিতর্কের অবসান
