আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্র সরকার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করল এক যুগেরও বেশি সময় পরে সবচেয়ে বড় এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধি। এর ফলে ভারতীয় মদ (IMFL)-এর উপর রাজ্য এক্সাইজ ডিউটি প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এর জেরে খুচরো বাজারে মদের দাম বেড়ে গিয়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। দেশি মদে ১৪ শতাংশ এবং আমদানিকৃত প্রিমিয়াম মদে ২৫ শতাংশের মতো দামবৃদ্ধি হয়েছে। বিয়ার ও ওয়াইনের ওপর এই মুহূর্তে বাড়তি কর চাপানো হয়নি। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, এবার থেকে মদ কিনতে হলে ঘটি-বাটি বেচে কিংবা বাড়ি বন্ধক রেখে লোন নিয়ে মদ কেনার সময় এসে গেছে!
প্রসঙ্গত, গত ১৪ বছরে এই প্রথমবার এভাবে মদের দাম বৃদ্ধি পেল মহারাষ্ট্রে। সুরাপ্রেমীদের সংসারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেকেই বলছেন, “এই দামে তো এখন বিয়ের গয়নাও বিক্রি করতে হবে এক পেগ মদ খাওয়ার জন্য।” সরকারের যুক্তি, রাজকোষে টান পড়ায় এই করবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে মোট রাজস্বের ১০ শতাংশই মদ বিক্রির উপর নির্ভর করবে বলে আশা করছে সরকার। এক্সাইজ দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, আগে যেখানে উৎপাদনমূল্যের তিনগুণ কর বসত, এখন তা সাড়ে চার গুণ হবে। এই নতুন করব্যবস্থায় এখন ১৮০ মিলি IMFL-এর দাম ১২০-১৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়ে যাবে কমপক্ষে ২০৫ টাকা। প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে একই পরিমাণ বোতলের দাম বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ৩৬০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ থেকে ৩৩০ টাকার মধ্যে। দেশি মদের দামও বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পৌঁছেছে।
এই দামবৃদ্ধির পাশাপাশি একটি নতুন ক্যাটাগরি চালু করেছে সরকার—মহারাষ্ট্র-মেড লিকার (MML)। এটি মূলত শস্যভিত্তিক মদ, যার দাম রাখা হয়েছে ১৪৮ টাকা। সরকারের অভিমত, এই নতুন ক্যাটাগরি চালু করে রাজ্যের ৭০টি বন্ধ বা অর্ধ-কর্মরত মদ তৈরির কারখানাকে সচল করা যাবে। মদের দামে এক লাফে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি মহারাষ্ট্র সরকার চালু করেছে একটি নতুন শ্রেণির মদ—‘মহারাষ্ট্র-মেড লিকার’ বা সংক্ষেপে MML। এই নতুন ধরনের মদ মূলত শস্য থেকে তৈরি, এবং এটিকে এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮০ মিলি বোতলের ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়েছে ১৪৮ টাকা, যা ইচ্ছাকৃতভাবেই বর্তমান IMFL (ইন্ডিয়ান মেইড ফরেন লিকার)-এর মূল্যের কাছাকাছি রাখা হয়েছে, যাতে MML ধীরে ধীরে IMFL বাজার দখল করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিহারে 'নারী শক্তি' এবং যুবকল্যাণে নীতীশ কুমারের বড় ঘোষণা, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে
রাজ্য এক্সাইজ দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই নতুন ক্যাটাগরির মাধ্যমে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে রাজ্যের সেই ৭০টি মদ উৎপাদনকারী কারখানাকে, যেগুলো চিনি থেকে তৈরি মদ (মলাসেস) এবং শস্যভিত্তিক মদ তৈরি করে। তার বক্তব্য, “এই ৭০টির মধ্যে ২২টি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আরও ১৬টি কারখানায় কোনও উৎপাদন হয় না, শুধুমাত্র দোকানে মদ বিক্রির লাইসেন্স নবীকরণ করেই চলছে। বাকি ৩২টি কিছুটা উৎপাদন করে, যার মধ্যে মাত্র ১০টি কারখানা পুরো রাজ্যের ৭০ শতাংশ IMFL তৈরি করে থাকে।”
এই MML ছাড়ের সুবিধা পেতে হলে যেসব কারখানা এখন মলাসেস থেকে মদ তৈরি করে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে শস্যভিত্তিক মদ উৎপাদনে পরিবর্তন করতে হবে। যদিও এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থের অভিযোগও উঠেছে। এক্সাইজ দপ্তরের ওই আধিকারিক দাবি করেন, “বেশিরভাগ শস্যভিত্তিক মদ প্রস্তুতকারক সংস্থা রাজনীতিকদের মালিকানায়। এই সিদ্ধান্ত মূলত তাদের আর্থিক সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, এক্সাইজ কর্তারা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন শ্রেণি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা প্রতিবেশী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার মদের কর কাঠামো বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মতে, কর বাড়লেও এখনও মহারাষ্ট্রে এক্সাইজ ডিউটির হার অনেক রাজ্যের তুলনায় কম। তবে মদের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, অধিকাংশ শস্যভিত্তিক কারখানার মালিক নাকি রাজনীতিকরাই।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর্মীরা এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, মদের দাম যতই হোক না কেন, সুরাসক্তরা উপায় বের করবেই। এর ফলে পরিবারে অশান্তি, দারিদ্র্য, অপরাধ ও গার্হস্থ্য হিংসা বাড়তে পারে। মদ্যপানের ফলে লিভার সিরোসিস, মানসিক অবসাদ, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অবশেষে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই দামবৃদ্ধিতে সরকার রাজস্ব বাড়াতে পারবে কি না, আর সাধারণ মানুষ কতটা বিপন্ন হবেন এই মদ্যনীতি পরিবর্তনের ফলে? সুরার প্রেমে এবার সত্যিই মরিয়া হয়ে উঠবে কি মহারাষ্ট্রবাসী, নাকি জল ছেড়ে দেওয়ার মতোই মদও ছাড়বে তারা?
