আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া (Special Intensive Revision বা SIR) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। কমিশন হঠাৎ করে ভোটারদের নানান নথি জমা দিতে বলায়, একে বাস্তবসম্মত না বলে মন্তব্য করেছে আদালত। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ কমিশনের ২৪ জুনের নির্দেশে আইনি বৈধতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ওই নির্দেশে কমিশন জানায়, রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২১(৩) ধারা অনুযায়ী এই বিশেষ সংশোধন চালু করা হচ্ছে।

“নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব ভোটারের নয়” 
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝার পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল আদালতে বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ওপর নাগরিকত্ব প্রমাণের বোঝা চাপাচ্ছে। “আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আগে কমিশনের হাতে এমন প্রমাণ থাকতে হবে যাতে বোঝা যায় আমি ভারতীয় নাগরিক নই”, তিনি বলেন। সিব্বল আরও জানান, আধার, রেশন কার্ড, এমএনআরইজিএ জব কার্ড, ভোটার আইডি কার্ডের মতো সাধারণ নথিগুলোকেও কমিশন বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করছে না। এতে সাধারণ মানুষ চরম সমস্যায় পড়ছেন।

আধার কেন অগ্রহণযোগ্য?
বিচারপতি বাগচী কমিশনের পক্ষ থেকে আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে অগ্রহণযোগ্য বলায় প্রশ্ন তোলেন। “আপনারা যেসব নথি গ্রহণ করছেন, সেগুলোও তো নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না”, বলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারের বাইরের বিষয়—এটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ।

নির্বাচনের আগে এই তৎপরতা কেন?
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময় এই বিশাল পরিসরের কাজ বাস্তবসম্মত নয়। “একজন ভোটারের নাম তালিকা থেকে কেটে দিলে তাকে আপিল করতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সে হয়তো আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার হারাবে”, তিনি মন্তব্য করেন। অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভিও যুক্তি দেন, “এই ধরনের বৃহৎ পরিসরের কাজ নির্বাচন থেকে আলাদা করে করা উচিত।”

আরও পড়ুন: ধর্ম ও জাত পরিচয় ছাড়াই সন্তানদের বড় করে তোলার পক্ষে সওয়াল আদালতের

“৩০ দিনের মধ্যে এই কাজ কীভাবে সম্ভব?”
বিচারপতি বাগচী বলেন, “যে দেশে সেন্সাস করতে এক বছর লাগে, সেখানে ৩০ দিনের মধ্যে ভোটার যাচাই কীভাবে হবে?” তাঁর আশঙ্কা, বহু নাম খসড়া তালিকায় বাদ পড়বে এবং সে ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ থাকলেও এত অল্প সময়ে তা করা কঠিন।

নির্বাচন কমিশনের সাফাই
কমিশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট রাকেশ দ্বিবেদী জানান, ইতিমধ্যেই ৫ কোটিরও বেশি ফর্ম জমা পড়েছে এবং আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। “কোনও প্রকৃত ভোটারকে বাদ দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য কমিশনের নেই”, বলেন তিনি।

আদালতের নির্দেশ
শেষে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বলে, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড ও রেশন কার্ড যেন এই বিশেষ সংশোধনের জন্য গ্রহণযোগ্য নথি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৮ জুলাই, ২০২৫।