আজকাল ওয়েবডেস্ক: আন্তর্জাতিক খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক শক্তিপরীক্ষার নতুন ধারা। সম্প্রতি ইউক্রেনের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার মাধ্যমে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পেল ওয়াশিংটন। পাশাপাশি, কঙ্গো ও রোয়ান্ডার মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাও করছে যুক্তরাষ্ট্র, যার পেছনে রয়েছে কঙ্গোর বিপুল খনিজ ভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার অর্জনের কৌশলগত লক্ষ্য।

দূষণমুক্ত জ্বালানি, বৈদ্যুতিক যান, আধুনিক প্রতিরক্ষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে লিথিয়াম, কোবাল্ট, গ্যালিয়াম ও রেয়ার আর্থ উপাদানের ওপর। এই খনিজ সম্পদের সরবরাহনির্ভর শিল্প পরিকাঠামো এখন জাতীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

চীন গত তিন দশকে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে ৯০% পর্যন্ত 'রেয়ার আর্থ' প্রক্রিয়াকরণের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। ২০১০ সালে জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনার সময় রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে চীন প্রমাণ করে যে খনিজ সম্পদও এখন রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার।

যুক্তরাষ্ট্র এই চীন-নির্ভরতা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে—২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন জারি করে নির্বাহী আদেশ, ২০২৩ সালে বাইডেন সরকার চীনের আধুনিক চিপ প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করে এবং ২০২৫ সালে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের উপর ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতও পিছিয়ে নেই। ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচটি লিথিয়াম ব্লকে অনুসন্ধানের চুক্তি করেছে ভারত। একইসঙ্গে ‘ন্যাশনাল ক্রিটিকাল মিনারেল মিশন’-এর আওতায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরোয়া বিনিয়োগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে খনিজ অনুসন্ধানে ভারতের উদ্যোগ, যেমন ‘ইন্ডিয়াAI হ্যাকাথন’, বিশ্বমঞ্চে এক নতুন ভূমিকা গড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্ব খনিজ কূটনীতির এই নতুন ধারা শুধু বাণিজ্যের নয়, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা আধিপত্যের ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করছে।