আজকাল ওয়েবডেস্ক: শারজা থেকে দুবাই কতদূর? সার্চ ইঞ্জিন বলছে ৩৩ মিনিটের ব্যবধান দুই শহরের। এই শারজা আর দুবাই যেন এক বিন্দুতে এসে মিশে গেল। ১৯৯৮ সালে শারজায় মরুঝড় তুলেছিলেন শচীন রমেশ তেন্ডুলকর। আর এই ২০২৫-এ বিরাট কোহলি দুবাইয়ে এক অন্য অবতারে ধরা দিলেন। শচীন প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে।  সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়াকে দেখলেই জ্বলে উঠতেন শচীন।

 

বিরাট কোহলির আবার পাকিস্তানকে দেখলে সেরাটা বেরিয়ে আসে। বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরে। নইলে প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ, নিন্দুকদের নখ-দাঁতের আঁচড়ে রক্তাক্ত এক মানুষ কীভাবে এই খেলা খেলতে পারেন! সমালোচনার জবাব কোনওদিনই মুখে দেননি তিনি। তাঁর পছন্দও নয়। বরাবর তিনি জবাব দিয়ে এসেছেন ব্যাটের মাধ্যমে। যখনই তাঁকে নিয়ে, তাঁর দলে থাকা নিয়ে, তাঁর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিরাট কোহলি জবাব দেওয়ার জন্য এমন একটা মঞ্চ বেছে নিয়েছেন যেখানে তিনিই রাজা।

 

২০২২ সালে মেলবোর্নে এমনই একটা মঞ্চ ছিল তাঁর কাছে। ৯০ হাজার দর্শকের সামনে যেখান থেকে ম্যাচ বের করেছিলেন বিরাট সেটা হয়তো শুধুমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব। হ্যারিস রউফকে মারা ওই দুটো ছক্কা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এদিন দাঁতে দাঁত চেপে যেভাবে তিনি ইনিংস গড়লেন, তাতে তাঁর তুলনা তিনিই। রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর আগের দিন ভারতকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেছিলেন গিল। তবে এদিনের পরিবেশ ছিল অন্যরকম।

 

চাপের ম্যাচে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ বের করলেন কোহলি। বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁর নামের পিছনে ‘চেজ মাস্টার’ ট্যাগ লাগানো আছে। রান তাড়া করায় তিনিই যে এখনও রাজা তাও মনে করিয়ে দিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। কেরিয়ারের এই সাহাহ্নে পৌঁছেও তিনি সেরার সেরা। অথচ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এই কোহলিকে নিয়েই অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। বিজিটিতে অফ ফর্মে থাকা কোহলিকে এবার বসানো হোক, রঞ্জি খেলানো হোক। সরব হয়েছিলেন অনেকেই।

 

কিন্তু কোহলি ছিলেন কোহলিতেই। ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে অর্ধশতরান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান ম্যাচের আগে তাঁর পায়ে দেখা গিয়েছিল আইস প্যাক। প্রশ্ন উঠেছিল, বড় ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন তো? কিন্তু কিংয়ের মাথায় চলছিল অন্য কিছু। পাক ম্যাচের আগের দিন প্রায় দু’ ঘণ্টা আগে চলে এসেছিলেন নেটে। ডেকে নিয়েছিলেন সৌদি আরব আমিরশাহির প্রথম সারির বোলারদের। তার ফলও মিলল হাতেনাতে।

 

ফের একবার পাকিস্তানের কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠলেন তিনি। নিজের ইনিংসে একবারও আউটের সুযোগ দেননি প্রতিপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দলকে জিতিয়ে বেরোলেন। তাঁর দাপটে হেলায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাল ভারত। খুশদিলকে কভার দিয়ে চার মেরে শতরান করলেন কোহলি। সেলিব্রেশনে বুঝিয়ে দিলেন ‘চিন্তা কীসের? আমি তো আছি’।

 

শচীন যেমন তাঁর সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে  আশ্বস্ত করে গিয়েছেন এই বলে, ''আমি তো আছি। চিন্তা কোথায়?'' বিরাটও অস্ফুটে তেমনই বলে যাচ্ছেন। বিরাট কোহলি হয়ে উঠছেন বনস্পতি। যিনি ফল, ফুল, ছায়া দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করছেন। গর্ব করে আমরা বলতে পারি, আমাদের একজন বিরাট কোহলি আছেন। ঠিক যেমন আগে বলতাম, আমাদের একজন শচীন তেণ্ডুলকর রয়েছেন।