আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেসি এসেছিলেন কলকাতায়। অপেক্ষা করেছিল গোটা শহর। তবে অপেক্ষার ছবি আর বাস্তব পরিস্থিতির ছবির যে ফারাক বিস্তর, স্পষ্ট হয়ে যায় শনিবার দুপুরেই। ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় যেন মেসি ম্যাসাকার ডে। চরম বিশৃঙ্খলা, তীব্র অশান্তি, অনুরাগী-সমর্থকদের ক্ষোভ। মাঝ-মাঠ থেকেই ফিরে যান মেসি। এসবের মাঝেই, শনিবার দুপুরেই বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল উদ্যোক্তা শতদ্র দত্তকে। রবিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল।
রবিবার শতদ্রু দত্তকে তোলা হয় বিধাননগর মহকুমা আদালতে। সেখানে তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর তেমনটাই। শনিবারের চরম বিশৃঙ্খলার পর, দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রবিবারেও তাঁকে আদালতে তোলার সময় বহু মানুষের জমায়েত হয়। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে তখনও। উদ্যোক্তা শতদ্রুর উদ্দেশে স্লোগান দেন অনেকেই।
মেসির কলকাতা সফর প্রসঙ্গে, উল্লেখ্য শনিবারের ঘটনাবলী। শনিবার কলকাতার জন্য ঘটনাবহুল, ঘটনাবহুল মেসির জন্য এবং আরও বহু খেলোয়াড়, অনুরাগী, সমর্থকদের জন্য। শনিবার মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ক্ষুব্ধ জনতা দখল নিয়ে নেয় যুবভারতীর। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মেসিকে ঘিরে ছিলেন নেতা-মন্ত্রীরাও। আরও অভিযোগ, মেসি যুবভারতীতে পৌঁছোতেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখাই যায়নি। চড়া দামে টিকিট কেটেও মেসিকে দেখতে না পাওযায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় ব়্যাফ। ছেঁড়া হয় মেসির পোস্টারও।
ঘটনার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ক্ষমা চান মেসি'র কাছে। শনিবার মমতা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, 'আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা দেখা গিয়েছে, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও হতবাক। যাঁরা তাঁদের প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসিকে এক ঝলক দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন, সেই সকল হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী ও ভক্তদের সঙ্গে অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলাম। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি লিওনেল মেসি, সেইসাথে সকল ক্রীড়াপ্রেমী ও তাঁর ভক্তদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।' সঙ্গেই তিনি লেখেন, 'আমি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের সভাপতিত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি, যার সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। এই কমিটি ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত করবে, এর জন্য দায়ী কে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করবে। আরও একবার, আমি সকল ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে আমার আন্তরিকভাবে দুঃখিত।'
ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সামনে আসে রাজ্য পুলিশের ডিজি'র বক্তব্য। তিনি জানান, 'মেসি খেলছেন না শুনে ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ বা উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। আয়োজকদেক পরিকল্পনা ছিল যে তিনি এখানে আসবেন, হাত নাড়বেন, নির্দিষ্ট কিছু লোকের সাথে দেখা করবেন এবং চলে যাবেন। এখন সরকার ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে, যা আয়োজকদের পক্ষ থেকে কোনও অব্যবস্থাপনা ছিল কি না বা অন্য কোনও কিছু ঘটেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আয়োজকদের লিখিত অবস্থায় জানাতে হবে যে টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হবে। নইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তাকে আটক করেছি।' উদ্যোক্তাকে আটক, গ্রেপ্তারির পর, রবিবার ১৪দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠাল আদালত।
