কৃশানু মজুমদার: ২৭ বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে কুয়ালা লামপুরে আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথমবার বিশ্বকাপে নেমে পাকিস্তানকে হারানোর পিছনেও বড় অবদান 
ছিল তাঁর। ব্যাট হাতে করেছিলেন সর্বোচ্চ রান। সেই আক্রম খান এক নিঃশ্বাসে বলছেন, ''পাকিস্তানে গিয়ে বাবর আজমদের হারানো সম্ভব। কিন্তু ভারতের মাটিতে রোহিত-কোহলিদের মাটি ধরানো একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার।''  

পদ্মাপারের গুমোট ভাব এখনও কাটেনি। ক্রিকেট নিয়ে উথালপাতাল করা ভালবাসা অনেকটাই কমে গিয়েছে। ভারতের মাটিতে টিম ইন্ডিয়াকে বেগ দিতে পারলে বন্য 
ক্রিকেট প্রেমে হয়তো ভেসে যেত বাংলাদেশ। তা তো হয়ইনি, উলটে প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে 'শান্ত'ই থেকে গিয়েছে বাংলার বাঘেরা।

ধারে ও ভারে এই ভারত অনেক এগিয়ে বাংলাদেশের থেকে। ফলে টাইগারদের হারটাও প্রত্যাশিতই। প্রবলতর প্রতিপক্ষের কাছে এই পরাজয়ে তাই গ্লানি নেই বলেই মনে করছেন সে 
দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। রোহিত-ব্রিগেডের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের দিন শাকিবদের ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ জয়ের স্মৃতি। চলতি মাসের গোড়ায় পাক-জয় সম্পূর্ণ করেছে টাইগাররা।  

সেই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে আজকাল ডিজিটাল-কে দূরভাষে আক্রম খান বললেন, ''সব ফরম্যাটেই ভারত অত্যন্ত শক্তিশালী দল। ওদের সঙ্গে এঁটে ওঠা কঠিন। কখনওই এই কথা বলব না যে ভারতকে আমরা হারাতে পারতাম। আমরা বড়জোর চেষ্টা করতে পারি, লড়াই দিতে পারি। তবে ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছেলেদের লড়াই দেখার পর বলতেই হচ্ছে, পাকিস্তানকে টেস্ট ফরম্যাটে হারানো সম্ভব। আর সেটা আমরা করে দেখিয়েছি।'' কথাগুলো বলার সময়ে রীতিমতো গর্বিত শোনাচ্ছিল আক্রমকে।

উপমহাদেশের ক্রিকেটে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম পাওয়ার হাউজ গৌতম গম্ভীরের দল। টেস্ট ফরম্যাটে শান্তর বাংলাদেশও ধীরে ধীরে উন্নতি 
করছে। কিন্তু টেস্ট ফরম্যাটে পাকিস্তানের সেনসেক্স দ্রুত পড়ছে। ক্রমশ পিছু হঠছে পাকিস্তান। প্রাক্তন পাক ক্রিকেটাররা দেশের এই ভরাডুবি দেখে 'গেল গেল' রব 
তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া, জনমানসে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে, তবে কি এই পাকিস্তান টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের থেকেও পিছিয়ে পড়ছে? 

প্রশ্নটা সরাসরি ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ককে। উত্তরে আক্রম খান বলছেন, ''আমি এর সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। পাকিস্তানের থেকে টেস্টে আমরা 
অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি। সাম্প্রতিককালে টেস্টে আমাদের ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা কোথায় পাকিস্তানের? একসময়ের এত শক্তিশালী একটা দলের আজকে 
এই অবস্থা?'' পাকিস্তানের এই অধোঃগতিতে বিস্মিত আক্রম খান।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু' টেস্টের সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। আর দুটোতেই শাকিবরা শেষ হাসি হাসেন। একবার জিতলে তাও নয় বলা যেত ফ্লুকে জিতেছে বাংলাদেশ। ধরে নেওয়া হত, এটা একটা অঘটন ছাড়া কিছু নয়।

কিন্তু দুটো টেস্টেই জেতা বলে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। সময়ের নিয়মেই রক্তাল্পতা ঘটেছে পাক ক্রিকেটে। আক্রম বলছেন, ''দ্বিতীয় টেস্টে একসময়ে ২৬ রানে ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে লিটন দাস সেঞ্চুরি করে। ঘুরে দাঁড়িয়ে আমরা টেস্ট জিতি।''  
 
চেন্নাইয়ে এসে পাক জয়ের স্বাদ তেতো হয়ে যায় শাকিবদের। প্রথম ইনিংসে একসময়ে ভারতের টপ অর্ডারকে ধসিয়েও দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু টিম ইন্ডিয়া প্রতিটি 
বিভাগেই অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই শুরুতে খানিক বেসামাল হয়ে গেলেও শেষমেশ টেস্ট জিততে সমস্যা হয়নি রোহিতদের।

হাসান মাহমুদের মতো বোলারের উঠে আসা বড় প্রাপ্তি বাংলাদেশের কাছে। অতীতে স্পিন বোলিং ছিল তাদের তুরুপের তাস। ইদানীং কালে বাংলাদেশি পেসাররা ধস নামাচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে। 'ভারত মডেল' অনুসরণ করার ফলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন পেস বোলারদের দৌরাত্ম্য। আক্রম খান বলছেন, ''ইদানীং কালে ভারতকে অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। অতীতে ভারত স্পিন বোলিংয়ে শক্তিশালী ছিল। কপিল দেব ছাড়া সেরকম প্রতিভাবান পেস বোলার কোথায় ছিল ভারতে? ইদানীং কালে ভারতের ক্রিকেটে দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার-- বুমরা, সিরাজ,সামি। আমরাও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটকে অনুসরণ করছি। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন উইকেট করা হচ্ছে যেখান থেকে বোলাররা সাহায্য পায়। সেই পরিকাঠামোর জন্যই হাসান মাহমুদরা উঠে এসেছে।'' 

একসময়ে ইমরান খান বলতেন, বোলাররাই ম্যাচ জেতায়। হাসান মাহমুদরা একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যাট তো কথা বলল না! দ্বিতীয় ইনিংসে 
শান্ত ছাড়া আর লড়লেন কে! অনেকেই ক্রিজে এলেন আর গেলেন। তাদের এমন বেহাল অবস্থা দেখে আক্রম বলছেন, ''বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদেরও দায়িত্ব নিতে 
হবে। সিনিয়র ব্যাটসম্যান রয়েছে দলে। পরের টেস্টে ব্যাটসম্যানরা আরও বেশি দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবে এটাই আশা করব।'' 

সিরিজের ফলাফল কী হতে চলেছে, আক্রমের মতো গোটা বাংলাদেশ হয়তো সেই দেওয়াললিখন পড়ে ফেলেছে। সব ভুলে দ্বিতীয় টেস্টে অনুজদের একটা মরণকামড় দিতে 
বলছেন বহু যুদ্ধের সৈনিক আক্রম খান। শাকিবরা কি শুনতে পাচ্ছেন?