আজকাল ওয়েবডেস্ক: লর্ডসের ট্র্যাজিক নায়ক, ওভালের মহানায়ক। সেই মহম্মদ সিরাজ আবার ডিএসপি। 

তিনি যোদ্ধা। তিনিই আবার দেশনায়ক। এহেন ডিএসপি সিরাজের মাসিক বেতন কত? সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী হায়দরাবাদি মাসে প্রায় ৫৮, ৮৫০ থেকে ১, ৩৭, ০৫০ টাকা আয় করেন। 

অষ্টম পে কমিশন অনুযায়ী কিন্তু সিরাজের বেতন আরও বাড়বে। বর্ধিত বেতন অনুয়ায়ী তারকা পেসারের বেতনের অঙ্কটা হতে পারে মাসিক ৮০ হাজার থেকে সর্বাধিক ১.৮৫ লক্ষ টাকা। 

আরও পড়ুন: ১৯ বছরে ইতিহাস গড়লেন রাজস্থান রয়্যালসের তরুণ তারকা, শক্তিশালী এই দলের বিরুদ্ধে চালালেন ধ্বংসলীলা...

একসময়ে অভাবের মধ্যে কেটেছে সিরাজের ছোটবেলা। একবার রুটি বানাতে গিয়ে তাঁর হাত পুড় গিয়েছিল। তাঁর বাবা প্রতিদিন সিরাজকে ৭০ টাকা করে দিতেন অনুশীলনের জন্য। 

একবার অর্থের অভাবে ক্রিকে়ট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন সিরাজ। সিরাজের জীবন জুড়ে গল্প। তাঁর বাবা অটোরিকশা চালাতেন। একার হাতে সংসার টানতেন। বাবার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা সিরাজ সেই সময়ে হায়দরাবাদের বিভিন্ন মাঠে খেলে বেড়াতেন। 

তাঁর বাবা ঘাউস মহম্মদ যখন মারা যান, তখন ছেলে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। কোয়ারেন্টাইনের জন্য বাবার শেষকৃত্যে আসতে পারেননি। ছ' মাস পরে দেশে ফেরার পরে বাবাকে যেখানে সমাহিত করা হয়েছিল, সেখানে কিছুক্ষণ বসেছিলেন সিরাজ। তাঁর মা ছেলেকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। সিরাজ বলেছিলেন, ''মা, তুমি কাঁদছ কেন? আমি তো কাঁদছি না।'' 

সিরাজ সংসারের জোয়াল টানছেন। সেই সঙ্গে তিনি দেশের বোলিং বিভাগের লাইটহাউজও বটে। ইংল্যান্ডে বুমরাহ-হীন ভারতীয় বোলিংকে টেনেছেন। ভেঙেছেন ইংল্যান্ডকে। 

এহেন সিরাজকে নিয়ে কালি খরচ হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। সিরাজ তাঁর ক্রিকেটের মাধ্যমে সংসারের হাল ফেরানোর চেষ্টা করছেন। অষ্টম পে কমিশন লাগু হলে সিরাজের বেতন আরও বাড়বে। 

ওভালে জেতার জন্য ৩৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ভারতের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল চার-চারটি উইকেট। ভারতের সুযোগ কম। বরং ইংল্যান্ড অ্যাডভান্টেজে বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কিন্তু মহম্মদ সিরাজ অন্যকিছু হয়তো ভেবে রেখেছিলেন। দিনটা তাঁর। ওভাল টেস্টে লেখা থাকবে তাঁর নাম। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা শুরুতেই রান দিয়ে দিলেন একগাদা। চাপ বাড়ল ভারতের উপরে। সিরাজ বল হাতে প্রথমে ফেরালেন স্মিথকে। তার পরে ওভারটন। অন্যদিকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অ্যাটকিনসন। তিনি মারমুখী। এদিকে কৃষ্ণর ইয়র্কারে উইকেট ভাঙল টংয়ের। অ্যাটকিনসনের উইকেট ভেঙে ব্রিটিশ-ভূমে নতুন এক রূপকথা লেখেন সিরাজ। 

এদিকে ওভালে সিরাজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরে শচীন তেণ্ডুলকরের মতো কিংবদন্তি বলেছেন, ''পঞ্চম দিন যেভাবে সিরাজ শুরু করেছিল, তা এককথায় অসাধারণ। সিরিজ জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সিরাজ। যখনই ওকে দরকার হয়েছে, যখনই মনে হয়েছে মরণকামড়টা এবার দিক, তখনই সিরাজ নিজেকে নিংড়ে দিয়েছে। সিরাজ যেভাবে উইকেটগুলো নিয়েছে এবং পারফরম্যান্স তুলে ধরেছে, তার প্রাপ্য কৃতিত্ব কিন্তু পায় না।'' সিরাজ-বন্দনা এখন দেশজুড়ে। জশপ্রীত বুমরাহের মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলার না থাকলেও ভারত যে ম্যাচ জিততে পারে, তা ওভালে দেখিয়ে দিয়েছেন সিরাজ। 

আরও পড়ুন: 'তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ের সময় আমরা কেউ জন্মাইনি', কিংবদন্তি ক্রিকেটার 'স্টাম্পড' বাই সিরাজ