সম্পূর্ণা চক্রবর্তী
ইস্টবেঙ্গল - ২ (তালাল, ডেভিড)
এফসি গোয়া - ৩ (বোরহা-হ্যাটট্রিক)
কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুললেন মানোলো মার্কুয়েজ। প্রাক্তনীতেই বিদ্ধ ইস্টবেঙ্গল। আগের মরশুমে এই মাঠেই লাল হলুদ জার্সিতে খেলে গিয়েছেন। শুক্রবার রাতে চেনা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনেই হ্যাটট্রিক করলেন বোরহা হেরেরা গঞ্জালেজ। শেষ হয়ে গেল লাল হলুদের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন। আইএসএলের শুরুতেই হারের হ্যাটট্রিক। এফসি গোয়ার কাছে ৩-২ গোলে হারল ইস্টবেঙ্গল। বেঙ্গালুরু এফসি, কেরল ব্লাস্টার্সের পর এফসি গোয়া। ডুরান্ড কাপ, এএফসি মিলিয়ে টানা পাঁচ হার। রাতারাতি 'প্রফেসর' থেকে 'ভিলেন' বনে গেলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। গ্যালারিতে উঠল গো ব্যাক ধ্বনি। ভারতে কোচিং জীবনে স্প্যানিশ কোচের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। এর আগে অভিষেক আইএসএলে শুরুতেই তিন ম্যাচ হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। তবে সেবারের সঙ্গে এবারের পার্থক্য রয়েছে। আইএসএলে এবার সবচেয়ে ভাল দল গড়েছে লাল হলুদ। তারপরও এই হতশ্রী ফুটবল। তবে এদিন হারের দায় বার্তায় হিজাজি মাহেরের ওপরও। দুটো গোল তাঁর দোষেই খায়।
প্রথম ২১ মিনিটে জোড়া গোল হজম। ০-২ তে পিছিয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। লাল হলুদের কাঁটা প্রাক্তনী বোরহা হেরেরা। জোড়া গোলই তাঁর। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে শুরু করেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। চার বিদেশিকেই প্রথম একাদশে রাখেন। সামনে এক ক্লেইটন সিলভা। চলতি মরশুমে প্রথমবার শুরু করলেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। রক্ষণে আনোয়ার-হিজাজি জুটি। দুই ব্যাকে খেলান শৌভিক এবং জোথানপুইয়াকে। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন ইউস্তে।
প্রথম গোলের আক্রমণ শুরু হয় শৌভিকের ভুল থেকে। বোরহার সঙ্গে ওয়াল খেলে আবার স্প্যানিশ মিডিওর জন্য মাইনাস রাখেন দেজান। বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন দেবজিৎ। লাল হলুদ কিপারের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বরিস বলে পা ছোঁয়াতে পারেনি। বল তেকাঠিতে রাখেন বোরহা। ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টারে পুরোটাই ব্যাকফুটে ছিল ইস্টবেঙ্গল। আট মিনিটের মধ্যে আবার গোল। দলকে গোল খাওয়ান হিজাজি মাহের। বল ঠিকমতো রিসিভ করতে পারেননি জর্ডনের স্টিপার। তাঁর গাছাড়া মনোভাবের ফায়দা তুলে বল কেড়ে নেন বরিস। বাড়ান বোরহাকে। বাঁ পায়ের শটে নিখুঁত ফিনিশ স্প্যানিশ মিডিওর।
শুরুতেই জোড়া গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। ২৯ মিনিটে সমতা ফেরান মাদি তালাল। বক্সের মধ্যে ফরাসি প্লেমেকারকে ফাউল করেন নিম দর্জি। পেনাল্টি দেন রেফারি। ব্যবধান কমান মাদি। এরপরের সময়টা দাপট ছিল লাল হলুদের। একনাগাড়ে প্রেস করে ইস্টবেঙ্গল। কয়েকটা চোখধাঁধানো পাস বাড়ান মহেশ, নন্দকুমার। গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। বিরতির আগেই সমতা ফেরানো উচিত ছিল কলকাতার প্রধানের। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্লেইটন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে মহেশের পাস থেকে বাইরে মারেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গোয়ার রক্ষণে চাপ অব্যাহত রাখে ইস্টবেঙ্গল। বিরতির পরপরই কেন মহেশকে তুলে নিলেন কুয়াদ্রাত বোঝা গেল না। তবে একটা সময় ভালই খেলছিল লাল হলুদ। দু'বছর আগের ক্লেইটন হলে স্কোরশিটে নাম তুলে ফেলতেন। কিন্তু সেই ফর্ম এবং ফিটনেস কোনওটাই আর নেই। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে নন্দকুমারের পাস থেকে পোস্টের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। ইস্টবেঙ্গলের অ্যাটাকিং থার্ডে ব্যর্থতা কাজে লাগিয়ে আবার গোয়াকে এগিয়ে দেন বোরহা। এবারও ভুল সেই হিজাজির। উদান্তর পাস থেকে জর্ডনের ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে হ্যাটট্রিক বোরহার।
গতবছর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সুপার কাপ জেতার পর লোনে গোয়ায় যান তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি জিকসনকে তোলার পর রক্ষণ আরও ওপেন হয়ে যায়। ম্যাচের ৮১ মিনিটে জোড়া হলুদ (লালকার্ড) দেখে মাঠ ছাড়েন ম্যাকহিউ। শেষ ১০ মিনিট দশজনের গোয়াকে পেয়ে একটা চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে ব্যবধান কমে। আনোয়ারের শট গোয়ার কিপার কাট্টিমানির হাত থেকে বেরিয়ে যায়। বাঁ পায়ের শটে রাখেন পরিবর্ত ফুটবলার ডেভিড। কিন্তু সমতা ফেরাতে পারেনি। গোয়াও যে আহামরি খেলেছে, তেমন নয়। দ্বিতীয়ার্ধে মূলত লং বল খেলে জাতীয় দলের কোচের দল। এদিন যেকোনও দলই জিততে পারত। তবে কুয়াদ্রাতের দলের থেকে এমন ফুটবল প্রত্যাশিত নয়। 
ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী
