শোভেন ব্যানার্জি

"... বাল্যকালে বিবাহ দেওয়া অতিশয় নির্দয় ও নৃশংসের কর্ম। অতএব আমরা বিনয়বচনে স্বদেশীয় ভদ্র মহাশয়দিগের সন্নিধানে নিবেদন করিতেছি, যাহাতে এই বাল্য পরিণয় স্বরুপ দুর্নয় অস্মদ্দেশ হইতে অপনীত হয়, সকলে একমত হইয়া সতত এমন যত্নবান্ হউন" আজ থেকে প্রায় ১৭৫ বছর আগে ১৮৫০ সালে সর্বশুভাকরী পত্রিকায় প্রথম সংখ্যায় বাল্যবিবাহের দোষ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

তিনি আরও লিখেছেন— "অপ্রমত্ত শারীরতত্বাভিজ্ঞ বিজ্ঞ ভিষগ্বর্গেরা কহিয়াছেন, অনতীত শৈশব জায়া পতি সম্পর্কে যে সন্তানের উৎপত্তি হয়, তাহার গর্ভাবাসেই প্রায় বিপত্তি ঘটে, যদি প্রাণবিশিষ্ট হইয়া ভূমিষ্ঠ হয়, তাহাকে আর ধাত্রীর অঙ্কশয্যাশায়ী হইতে না হইয়া অনতিবিলম্বেই ভূতধাত্রীর গর্ভাশায়ী হইতে হয়। কথঞ্চিত যদি জনক-জননীর ভাগ্যবলে সেই বালক লোকসংখ্যার অঙ্ক বৃদ্ধি করিতে সমর্থ হয়, কিন্তু স্বভাবতঃ শরীরের দৌর্বল্য ও সর্বদা পীড়ার প্রাবল্যপ্রযুক্ত সংসারযাত্রার অকিঞ্চিৎকর পাত্র হইয়া অল্পকাল মধ্যেই পরত্র প্রস্থিত হয়। সুতরাং যে সন্তানোৎপত্তিফল নিমিত্ত দাম্পত্য সম্বন্ধের নির্বন্ধ হইয়াছে, বাল্য পরিণয় দ্বারা সেই ফলের এই প্রকার বিড়ম্বনা সঙ্ঘটন হইয়া থাকে।"

ঐতিহাসিক ভাবে নারীকে বিশ্বের প্রায় সব সমাজেই দুর্বল অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের দেশ ভারতে, নারীরা সামাজিক,সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা-সহ জীবনের সবক্ষেত্রেই পুরুষদের তুলনায় এখনও অনেকটাই পিছনে।

আজকে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কিছু তথ্য আমাদের জানার জন্য, ভাবার জন্য বিশেষ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়।

অর্থাৎ প্রতি তিন সেকেন্ডে একটি বাল্যবিবাহ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালীন জটিলতা। 

'গার্লস নট ব্রাইডস'-এর মতে ২০ বছরের কম বয়সী মায়ের ক্ষেত্রে মৃত সন্তান প্রসব এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার ৫০% বেশি। এনএফএইচএস-৫ এর সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যু ২৪.৯ এবং শিশু মৃত্যু ৩৫.২।

১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে করা মেয়েদের ১৮ বছর পার করে বিয়ে করা মেয়েদের তুলনায় তাদের সঙ্গীদের কাছ থেকে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বেশি (তথ্য সূত্র- প্লান ইন্টারন্যাশনাল কানাডা)।

বিশ্বের প্রতি তিন বিবাহিত কন্যা শিশুর একজন ভারতে বাস করেন। ভারতে প্রতি চার জনে একজন কন্যা ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিবাহিত হন।

ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ৪২%, বিহার ৪১% এবং ত্রিপুরায় ৪০% কন্যা শিশু ১৮ বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই বিবাহিত। UNICEF তথ্যে প্রকাশ ১৫ বছরের আগেই যাদের বিয়ে হয়েছিল সেই কন্যাশিশুদের প্রায় ৭০% ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম দিয়ে ছিলেন।

এনএফএইচএস-৫ জানাচ্ছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরী গর্ভবতীর হার ভারতে ৪৩% আর পশ্চিমবঙ্গে ৮১% ত্রিপুরার ৯১% পরেই। ৪১% বাল্যবিবাহিত কন্যা মনে করে স্বামীর স্ত্রীকে মারধর করা যুক্তি সম্মত এবং ৩৩% বিগত ১২ মাসের মধ্যে সহিংস ব্যবহার পেয়েছেন।

১৮৫০ থেকে ২০২৫ দীর্ঘ ১৭৫ বছর পার করেও বাল্যবিবাহ আমাদের দেশে এখনও একটা প্রধান সামাজিক সমস্যা হিসাবে রয়েই গিয়েছে।

কিছু ক্ষেত্রে আগের মতো ধর্মীয় অনুশাসন মানা বা স্বর্গলাভের আকাঙ্খার ঘাটতি দেখা গেলেও এর সঙ্গে প্রতিদিনের কঠিন বাস্তব যে কারণগুলো অনুঘটকের কাজ করতো যেমন দারিদ্র, অশিক্ষা, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা,সামাজিক ও পারিবারিক লিঙ্গ বৈষম্য, বংশকৌলিন্য, গোত্র পবিত্রতা, সাংস্কৃতিক অনুশাসন, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি এখনও অনেকটাই রয়ে গেছে। তাই এই একবিংশ শতাব্দীর সিকি ভাগ পার করেও বাল্যবিবাহের মতো অমানবিক প্রথা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।

১৯৭৯ সালে নারীর বিরুদ্ধে সবরকম বৈষম্য দুর করার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সংসদে গৃহীত হয়েছিল। এটা বলবৎ হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বিশ্বের ১৫০-এর বেশি দেশ এই সিদ্ধান্তে সামিল হয়েছিল।

১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সংসদে গৃহীত নারীর প্রতি হিংসাত্মক ঘটনার দূরীকরণ সংক্রান্ত ঘোষণায় সমস্ত রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল যাতে নারীদের প্রতি হিংসাত্মক ঘটনা বন্ধ করা ও তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

১৯৯৫-তে বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত নারী বিষয়ক চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলনে নারীর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের পূর্ণ উপস্থিতি, সমাজে নারীদের অবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষায় আরও বেশি সুযোগের উপর জোর দেওয়া হয়। 

রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যের ৫ নম্বর তালিকায় লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন। তালিকার ৫.৩ শিশু, বাল্য বিবাহ, জোর করে বিবাহ, মহিলাদের যৌনাঙ্গে আক্রমণ বা বিকৃতি সহ সকল ক্ষতিকর অভ্যাস দুর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার, মৌলিক কর্তব্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সবেতেই লিঙ্গ সমতার কথা বলা হয়েছে।

মৌলিক অধিকার অনুচ্ছেদ ১২ থেকে ৩৫-এ লিপিবদ্ধ আছে। বলা আছে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, জন্মস্থান নির্বিশেষে কোন বৈষম্য রাষ্ট্র করবে না। আবার অনুচ্ছেদ ১৫ (৩) বলছে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাষ্ট্র করতেই পারে। মৌলিক অধিকার ছাড়াও নির্দেশ মূলক নীতি ও কর্তব্য সমূহে নারীদের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ করার কথা বলা আছে।

আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজ্যস্তরীয়  বিভিন্ন উদ্যোগ থাকা সত্বেও একেবারে তৃণমূল স্তরে আমাদের সমাজে মেয়েদের অবস্থান উনবিংশ শতকের বিদ্যাসাগরের সময় থেকে একবিংশ শতাব্দীর চন্দ্র অভিযান পর্যন্ত কতটা পরিবর্তন হয়েছে?

৫ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্যে প্রকাশ ১৮ বছরের নীচে মহিলাদের ৩৩% বিবাহিত এবং ২১ বছরের নীচে ছেলেদের ১৮% বিবাহিত। এটা দেখায় যে মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এখানেই এটি এই জটিল সমস্যার লিঙ্গগত দিকটি তুলে ধরে।

সারা ভারত জুড়ে  সর্বত্র এই সমস্যা থাকলেও কিছু কিছু বিশেষ অঞ্চলে এর ব্যাপকতা কেন এতটা বেশি, তা সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার বিষয়। ৫ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় প্রকাশ ১৮ বছরের নীচে বিয়ে হওয়া মেয়েদের ২৭-ই গ্রামীণ ভারতের। বাল্যবিবাহের শিকার ৪৮% মেয়ে দের কোনও প্রথাগত শিক্ষা হয়নি এবং ৪০% অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের।

ধর্মীয় পরিচয়ে ২৩% হিন্দু, ২৬% মুসলিম, ১৫% খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ১২%। সামাজিক ক্ষেত্রে ২৬% তপশিলি জাতি/উপজাতি, ২২% পশ্চাৎপদ জাতি এবং সাধারণ ১৮%। সারা ভারতের মধ্যে শেষ ৫ বছরে বাল্য বিবাহের জাতীয় গড় ২৩.৩%। দেশের গড়ের থেকে অনেকটাই বেশি ৮টি রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ত্রিপুরা ৪০%-র বেশি নিয়ে সারনির উপর দিকে রয়েছে ( তথ্যসুত্র UNFPA) । 

আবার পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুর ৭.২%, মূর্শিদাবাদ ৭.৮% উত্তর ২৪ পরগনা ৭.৪%, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ৭.৪% এবং পশ্চিম মেদিনীপুর ৭% জেলাগুলিতে ১০-১৭ বছর বয়সী নাবালিকাদের বাল্যবিবাহের পরিসংখ্যান দেয় শেষ আদমসুমারি।

বাল্যবিবাহ কোনও নাবালকের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন, যার জন্য কোন শিশু সুস্থ ভাবে শিক্ষা অর্জন এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

বাল্যবিবাহ  শিশুদের ক্ষমতা, সুযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে এবং সামাজিক ও ব্যাক্তিগত বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

সোজা কথায় বাল্যবিবাহ হল শিশু নির্যাতন ও শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি শিশুর স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রচলিত ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে সমাজের এটি একটি জীবনের, ব্যক্তিস্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা এবং বিকাশের উপর অনায্য অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ। 

বিভিন্ন গবেষণায় ভারতে বাল্য বিবাহের প্রবনতার যে কারণগুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম মূখ্য কারণ হল ধর্মীয় অনুশাসন, দারিদ্র, সংস্কৃতি, অশিক্ষা, ঐতিহ্য এবং পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবে জারিত সামাজিক মূল্যবোধ যা মূলত কন্যার পরিবারের কাছে একটা স্বতন্ত্র মানুষ নয়, অনাদৃত বোঝা হিসাবে থাকে।

মনে করা হয় মেয়েটি পরের ঘরে চলে যাবে তাই তার পিছনে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন খরচ করা অর্থহীন।

পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের নগ্ন প্রকাশ আমাদের সমাজে সর্বস্তরে বর্তমান। বেশিরভাগ পরিবারেই পুরুষ সন্তান দের অনুপাতে মেয়ে সন্তানদের জন্য খাদ্য,শিক্ষা,স্বাস্থ্য বাবদ খরচ অনেক কম করা হয়।

প্রচলিত ধারণায় ভাবা হয়, 'মেয়েরা যতই লেখা পড়া করুক ক'দিন পরেই তো পরের ঘরে চলে যাবে', 'বিয়ের পরে তো সেই খুন্তিই নাড়তে হবে', 'বাচ্চা মানুষ করতে হবে', 'সংসার সামলাতে হবে', 'এসবে খরচ না করে টাকা জমাও, পন দিতে কাজে লাগবে'।

বেড়ে ওঠার কালে পরিবারের সন্তানদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের এই উৎকট প্রকাশ সুদুর অতীত কাল থেকে চলে আসা ভারতীয় সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সাক্ষ্য বহণ করে।

বাল্যবিবাহের ফলে শুধুমাত্র বিবাহিত কন্যা সন্তানটি নয় বিবাহ প্রসূত নবজাতকের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদিও ভয়ঙ্কর উদ্বেগের। নাবালিকা মায়েদের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় জটিলতা এবং শিশুমৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।

নাবালিকার গর্ভাবস্থা ও সন্তান ধারন ঝুঁকি বহুল। অকালপ্রসব, প্রসবকালীন জটিলতা, নবজাতকের কম ওজন, রক্তক্ষরণ, সেপসিস ইত্যাদি খুব স্বাভাবিক ঘটনা। 

বাল্যবিবাহ পারিবারিক হিংসার কারণ এর ফলে চিরস্থায়ী লিঙ্গ বৈষম্যের একটা দুষ্টচক্র তৈরি হয়। এতে শিশুদের মানবাধিকার তাদের জীবনের সেই পর্যায়ে লঙ্ঘিত হয়, যখন তাদের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষার প্রয়োজন থাকে।

বাল্যবিবাহ ভারতীয় সমাজে নারীর নিম্ন মর্যাদার সঙ্গে  সম্পর্কিত,নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বৈষম্যমূলক আচরণ গুলিকে প্রশ্রয় দেয়। 

ভারতবর্ষে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করণে আইন করা হয়েছে। ১৯২৯ সালে প্রথম আইন করে বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ণ করা হয়।

এই আইনে ছেলেদের ১৮ বছর এবং মেয়েদের ১৪ বছর নুন্যতম বিবাহের বয়স স্থির করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৪৯ সালে মেয়েদের বিবাহের নুন্যতম বয়স স্থির  হয় ১৫ বছর।

১৯৭৮ সালে স্থির করা হয় বিবাহের জন্য ছেলেদের নুন্যতম বয়স ২১ বছর এবং মেয়েদের ১৮ বছর। ১৯২৯-এর নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিবর্তে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে ২০০৬ সালে ভারত সরকার বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণয়ণ করে।

এছাড়াও ভারতে বিবাহ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা আইন আছে। হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫, মুসলিম পার্সোনাল আইন ১৯৩৭, ভারতীয় ক্রিশ্চিয়ান বিবাহ আইন ১৮৭২, পারসি বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৬।  

যদিও বাল্যবিবাহ একটা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে রয়েছে যা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য উভয়ই, কিন্তু তবুও বৈধ! বিভিন্ন আইনে বিবাহের বয়স ও বিভিন্ন। এক অদ্ভুত ব্যবস্থা !

মানসম্মত শিক্ষার অভাবে অজ্ঞতা, এবং অজ্ঞতাই সব রকম সামাজিক কু-অভ্যাস, কু-প্রথা এবং কু-ফলের মুল কারণ। দেশে অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আইনি পরিবর্তন ছাড়াও জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি সুস্থ সামাজিক পরিবেশের, যেখানে কোনও শিশু সন্তান তার লিঙ্গ অনুসারে বৈষম্যের শিকার না হয়ে, পরিবারে বোঝা হিসাবে নয় একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসাবে সন্মান, মানবাধিকার নিয়ে মর্যাদার সাথে বিকশিত হওয়ার পরিবেশ পাবে। 

সমস্ত স্তরের মানুষ, সরকারি, বেসরকারি, গণসংগঠন, ধর্মীয় নেতা,  সবাইকে নিয়ে চিহ্নিত রাজ্য, জেলা এবং অঞ্চলগুলিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দ্রুত কার্যকরী আগ্রাসী পদক্ষেপ, বাধ্যতামূলক বিবাহ ও জন্ম নিবন্ধন, ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত শিশুদের বাধ্যতামূলক মানসম্মত শিক্ষা, বাল্যবিবাহের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে জনসচেতনতায় ব্যাপক প্রচার, মেয়েদের অন্তত উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যলয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে বিশেষ উদ্যোগ।

বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, লাডলি বহেন যোজনা, কন্যাশ্রীর মতো একধিক জনমুখী উদ্যোগের তৃণমূল স্তরে সফল বাস্তবায়ন। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে অপশিক্ষিত ধর্মান্ধ ধর্মগুরু দের ফতোয়া অগ্রাহ্য করে ২০০৬ এর বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ আইন সব ধর্মের, সব নাগরিকের জন্য সারা দেশে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে।  প্রয়োজনে এর মোকাবিলায় আরও কঠোর আইন প্রণয়ণ ও তার কঠোরতম প্রয়োগ।