আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওজন ঝরানো থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষা বা ধর্মীয় বিশ্বাস- কারণ যা-ই হোক না কেন, আজকাল পুরোপুরি নিরামিষ খাবারের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক কালে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন, নিরামিষ আহার মানেই শরীর থাকবে একেবারে ঝরঝরে, রোগভোগের চিন্তা নেই। কিন্তু পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকদের একাংশ এই ধারণাকে পুরোপুরি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করে নিরামিষ খাবার গ্রহণ করলে শরীরে একাধিক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কোন কোন উপাদানের ঘাটতি?
মূল সমস্যাটি হল, কয়েকটি অপরিহার্য পুষ্টিগুণের অভাব। প্রাণীজ খাবার, যেমন- মাছ, মাংস, ডিম বা দুগ্ধজাত দ্রব্যে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা উদ্ভিদজ্জ খাবারে প্রায় পাওয়াই যায় না বা খুব কম পরিমাণে থাকে।
১। ভিটামিন বি-১২: চিকিৎসকদের মতে, নিরামিষাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ এই ভিটামিন। এটি মূলত প্রাণীজ খাবারেই পাওয়া যায়। এর অভাবে রক্তাল্পতা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এবং শারীরিক দুর্বলতার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ধরে এর ঘাটতি স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতিও করতে পারে।
২। প্রোটিনের গুণমান: যদিও ডাল, ছোলা, বিনস বা বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে, তবে প্রাণীজ প্রোটিনের মতো এগুলি ‘সম্পূর্ণ প্রোটিন’ নয়। অর্থাৎ, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সবকটি অ্যামাইনো অ্যাসিড এতে সঠিক অনুপাতে থাকে না। ফলে, শুধুমাত্র এক ধরনের উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উপর নির্ভর করলে পেশির দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
৩। আয়রনের অভাব: পালং শাক বা অন্যান্য সবজিতে আয়রন থাকলেও, তাকে বলে ‘নন-হিম আয়রন’। শরীর এই ধরনের আয়রন সহজে শোষণ করতে পারে না। অন্যদিকে, মাংসে থাকা ‘হিম আয়রন’ শরীর দ্রুত গ্রহণ করে। ফলে, নিরামিষাশীদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা, ক্লান্তি, চুল পড়ার সমস্যা বেশি দেখা যায়।
৪। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চললে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হওয়া স্বাভাবিক। এতে হাড় দুর্বল হয়ে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিও দেখা দেয়, যা ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য জরুরি।
৫। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মূলত সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায় এই উপাদান। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিরামিষ খাবারে-এর জোগান সীমিত হওয়ায় হার্টের সমস্যা বা মানসিক অবসাদের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কী?
পুষ্টিবিদদের কথায়, নিরামিষ খাবার অবশ্যই স্বাস্থ্যকর, কিন্তু তা হতে হবে সুষম এবং পরিকল্পিত। শুধুমাত্র ভাত, ডাল আর আলুভাজা খেয়ে নিজেকে নিরামিষাশী ভাবলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তাঁদের পরামর্শ, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের ডাল, শস্য, মরশুমি সবজি, ফল, বাদাম এবং বীজ রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন ডি বা আয়রনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিরামিষ আহারের সুফল পেতে চাইলে সচেতনতা এবং সঠিক পরিকল্পনাই একমাত্র পথ। নইলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বদলে অপুষ্টির শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।