পশ্চিমের অনেক দেশেই মদ্যপানকে সাধারণত এক ধরনের অবসর কাটানোর পথ বলে ধরে নেওয়া হয়য মানুষ সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বার বা পাবে যায়, সেখানে মূল উদ্দেশ্য থাকে গল্প-গুজব আর সময় কাটানো, খাবার নয়।

সেখানে প্রচলিত পানীয় হল ওয়াইন, বিয়ার বা হালকা ককটেল—যেগুলোর অ্যালকোহল মাত্রা সাধারণত ভারতীয় মদের তুলনায় অনেক কম। এসব পানীয় অনেক সময় ভারী খাবার ছাড়াই খাওয়া হয়, আর বারগুলোতে সাধারণত হালকা স্ন্যাকস, যেমন বাদাম বা চিপস দেওয়া হয়—যেগুলো সহজে খাওয়া যায়।
এছাড়াও পশ্চিমে দেশগুলিতে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন, তাই তাঁরা অ্যালকোহলের সঙ্গে ভারী খাবার খেতে চান না, যেন ক্যালোরি গ্রহণ সীমিত রাখা যায় এবং ওজন না বাড়ে।

অন্য দিকে, ভারতে মদ্যপান সাধারণত ঘরোয়া সমাবেশ বা ‘পার্টির অংশ। যেখানে খাবারই প্রধান আকর্ষণ। এখানে মদের সঙ্গে ভালমন্দ খাওয়ার অভ্যাস খুবই প্রচলিত, চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘চাখনা’। পানীয় হিসাবে বেশি দেখা যায় হুইস্কি, রাম বা বিয়ার—যার অ্যালকোহল মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি।

এখানে মানুষ সাধারণত মদ সরাসরি না খেয়ে খাবারের সঙ্গে খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, যাতে মদের প্রভাব কিছুটা কমে। খাবারের গুরুত্ব অনেকের কাছে এতটাই বেশি যে তাঁরা বিশ্বাস করেন খালি পেটে মদ্যপান ক্ষতিকর। তাই মদ খাওয়ার আগে এবং খাওয়া চলাকালীন সময়ে অনেক খাবার খাওয়া হয়। উপরন্তু অ্যালকোহল খিদে বাড়িয়ে দেয়, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে শক্তির ঘাটতি পূরণে মানুষ খেতে আগ্রহী হয়।

এ নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে যে কেন অ্যালকোহল খিদে বাড়িয়ে দেয় বা খাবারের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। আপনি যদি কখনও মদ খাওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে ক্ষুধার্ত অনুভব করে থাকেন, তাহলে জেনে নেন কেন তা হচ্ছে।

কীভাবে অ্যালকোহল আপনার মস্তিষ্ককে ক্ষুধার্ত করে তোলে?

মস্তিষ্কে প্রভাব: অ্যালকোহল হাইপোথ্যালামাসকে প্রভাবিত করে—মস্তিষ্কের যে অংশ খিদে, তাপমাত্রা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালকোহল খিদের সঙ্কেত বহনকারী কিছু স্নায়ুকোষ সক্রিয় করে, যার ফলে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

স্বাদ ও গন্ধের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি: অ্যালকোহল খেলে খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ আরও তীব্রভাবে অনুভূত হয়, ফলে খাবার আরও আকর্ষণীয় মনে হয়। এ ক্ষেত্রেও হাইপোথ্যালামাস ভূমিকা রাখে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া: অ্যালকোহল রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে শরীরে শক্তি কমে যায়। তখন মস্তিষ্ক সঙ্কেত পাঠায় খাওয়ার জন্য, বিশেষ করে মিষ্টি বা নোনতা খাবারের জন্য।

আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া: মদ্যপানের পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়, ফলে স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
২০১৭ সালে নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালকোহল সরাসরি মস্তিষ্কের খিদে-সংক্রান্ত স্নায়ুকোষকে সক্রিয় করে। তাই মদ্যপানের সময় খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছাও আরও বেড়ে যায়।