আজকাল ওয়েবডেস্ক: যাঁরা প্রতিটি কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে চান, যাঁরা ‘পারফেকশনিস্ট’ বলে পরিচিত, তাঁরাই কর্মক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন জীবনে বার্ন আউটের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। পেশাগত সাফল্যের পথে নিঃসন্দেহে মনোযোগ ও নিষ্ঠা অপরিহার্য। কিন্তু অতিরিক্ত মনোযোগ কখনও কখনও শরীর ও মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার পরিণতিতে দেখা দেয় বার্ন আউট।

বার্ন আউট কী?
‘বার্ন আউট’ এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি, যা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত চাপ বা কাজের ভারে জর্জরিত থাকার ফল হিসাবে দেখা দেয়। ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) একে পেশাগত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ‘অকুপেশনাল ফেনোমেনন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

অতিরিক্ত মনোযোগই কেন দায়ী?
অতিরিক্ত মনোযোগী বা পারফেকশনিস্ট ব্যক্তি কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে থাকেন যে তাঁরা নিজের শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতাকে অগ্রাহ্য করেন। তাঁরা বিশ্রাম নিতে চান না, ভুল করাকে ভয় পান, এবং সবসময় নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাঁদের কাজের চাপ কখন যে অতিরিক্ত হয়ে যায়, তাঁরা তা বুঝতেই পারেন না।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, নিখুঁত কাজের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক থেকেই আসে আত্মসমালোচনা, অপরাধবোধ এবং সবসময় “আরও ভাল করতে হবে” এমন এক অবসেশন। এই মানসিক চাপ ক্রমশ বার্ন আউটের দিকে ঠেলে দেয়।

কোন কোন লক্ষণ দেখে বোঝা যায় বার্ন আউট?
বার্ন আউটের কিছু প্রাথমিক ও লক্ষণীয় উপসর্গ রয়েছে, যেগুলি শনাক্ত করতে পারলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

চিরস্থায়ী ক্লান্তি: ঘুম বা বিশ্রামের পরেও মনে হয় শক্তি ফিরছে না। সবসময় অবসন্ন বোধ হয়।

উৎসাহহীনতা ও উদ্দীপনার অভাব: কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। প্রিয় কাজও তখন বিরক্তিকর লাগে।

নৈরাশ্য ও হতাশা: নিজের উপর থেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। ছোট ছোট সমস্যাও বড় বলে মনে হয়।

মনোযোগে ঘাটতি: আগে যেসব কাজে মন দিয়ে করা যেত, সেগুলোতেও মন বসে না। ভুলভ্রান্তি বাড়ে।

শারীরিক উপসর্গ: মাথাব্যথা, পেশীতে টান, ঘুমের সমস্যা, হজমের গণ্ডগোল ইত্যাদি দেখা দেয়।

অসামাজিকতা: পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশায় অনীহা দেখা দেয়। একাকিত্ব পছন্দ হয়।


সব মিলিয়ে কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকা ভাল, কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নিয়ে নিখুঁত হওয়ার প্রয়াস শরীর ও মনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সময় থাকতে সচেতন হওয়া এবং কাজ ও বিশ্রামের মাঝে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাই হল সুস্থভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠি।