আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাষা এমন এক বহমান বিষয় যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। কখনও তাতে যুক্ত হয় নতুন উপাদান, কখনও কখনও বাদ যায় জীর্ণ পুরাতন বিভিন্ন শব্দ। ঠিক একই ভাবে বিভিন্ন ভাষাতেই কালের নিয়মে প্রচলিত হয় কিছু প্রবাদ বা বাগধারা। তেমনই একটি বাগধারা হল ‘রথ দেখা কলা বেচা’। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এই বাগধারার নেপথ্যে রয়েছে বাংলার এক প্রাচীন সামাজিক রীতি।

সাধারণত বিভিন্ন বাগধারার উৎপত্তি হয় স্থানীয় কিছু বহুল প্রচলিত ঘটনার থেকে। এক্ষেত্রেও ‘রথ দেখা কলা বেচা’-র নেপথ্যে রয়েছে মাহেশের রথযাত্রা। ঐতিহাসিকদের মতে ১৩৯৬ সাল থেকে এই রথযাত্রা শুরু হয়েছে। পুরীর পর এটিই ভারতের প্রাচীনতম রথ যাত্রা। শোনা যায় এবং এখনও দেখা যায়, যখন এই রথ যাত্রা হয়, তখন শ্রীরামপুর এবং স্থানীয় অঞ্চলের মানুষ জগন্নাথের দিকে কলা ছুঁড়ে দেন। আর সেই কলার সরবরাহ বজায় রাখতেই গ্রামের চাষীরা নিজেদের উৎপাদিত কলা বিক্রয় করতে আসেন এখানে। আর সেখান থেকেই রথ দেখা এবং কলা কেনাবেচার বিষয়টি এসেছে। 

এখন প্রশ্ন হল, কলা ছোঁড়া হয় কেন? আসলে নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টি থেকে কোনও অঞ্চলে যখন কোনও বিশেষ দেবদেবীর পূজা করা হয় তখন তাঁর মধ্যে স্থানীয় রীতি এবং সংস্কৃতির ছাপ পড়ে। মানে সেই দেবতাকে নিজেদের রূপে রূপায়িত করার প্রক্রিয়া চলে। ঠিক যেমন ভাবে কৃত্তিবাস ওঝা যখন রামায়ণ রচনা করতে বসেন, তখন তার রূপ বাল্মীকির রামায়ণের তুলনায় ভিন্ন হয়ে যায়। সাহিত্য হিসাবে মহাকাব্য থেকে বদলে পাঁচালীর রূপ পায়। কারণ পাঁচালী বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে অনেক বেশি মানানসই। তেমনই বদলে যায় রামের চরিত্রও। বাল্মীকির রামায়ণ বীররসাত্মক। সেখানে রামের রাজবেশ উত্তর ভারতীয় রাজাদের মতোই বাহুল্য পরিপূর্ণ। অন্যদিকে শ্রীরাম পাঁচালীর রাম যেন বাংলা সমৃদ্ধ ঘরের এক উজ্জ্বল তরুণ, তাঁর অলংকার বলতে সামান্য মুক্তোর মালা। 

একই ভাবে জগন্নাথকে গ্রহণ করার সময়েও তাঁকে নিজেদের মতো করে বদলে নিয়েছে বাঙালি। রথযাত্রায় তিনি মাসির বাড়ি যাচ্ছেন। ঠিক যেমন গৃহস্থের সন্তান যায়। তাই সেই যাত্রায় তাঁরও খিদে পায়। আর লোকাচার অনুযায়ী, সেই ক্ষুধা নিবারণ করতে তিনি কলা এবং জিলিপি খান। আর তাই ভক্তরাও প্রিয় প্রভুকে তাঁর পছন্দের ফল উৎসর্গ করেন। শত শত বছর ধরে চলতে চলতে এই রীতি একটি লোকাচারে বদলে গিয়েছে।