আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যদি বিষাক্ত বা অসহনীয় হয়ে ওঠে, তবে কর্মীদের মধ্যে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, ওয়ার্কিং আওয়ার বা কাজের সময় অত্যধিক লম্বা হলে এবং অত্যধিক কাজের চাপ থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
সম্প্রতি ২,০০০-এর বেশি চাকুরিজীবীর উপর করা এক বছরব্যাপী একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে গুরুতর অবসাদের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে এই ঝুঁকি আরও বাড়তে শুরু করে। আর ৫৫ ঘণ্টার পর থেকে তা রীতিমতো বিপজ্জনক রূপ নেয়।
বিজ্ঞানপত্রিকা বিএমজে তে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানানো হয়েছে, এই ধরনের কর্মপরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে মস্তিষ্কের ‘থ্রেট রেসপন্স’  ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে মস্তিষ্কে কর্টিসোলের মতো স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা মারাত্মক হারে বাড়ে, যা স্মৃতিশক্তি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলির ফলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং কর্মীরা সহজেই ‘বার্নআউট’ বা অবসাদের শিকার হন।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের থেকে সমর্থন না পেলে এই সমস্যা আরও গভীর হয়। তবে, সামাজিক যোগাযোগ এবং সহকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ থাকলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে।
গবেষকদের মতে, এই সমস্যা সমাধানে সংস্থাগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি কর্মীর কাজের পরিধি নির্দিষ্ট করা। কাজের চাপ কমানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়তার ব্যবস্থা করা সংস্থার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
পাশাপাশি, ব্যক্তিগত স্তরেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত বিরতি নেওয়া, শরীরচর্চা করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম কর্মীদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। গবেষকরা মনে করছেন, রাতারাতি একটি সংস্থার সংস্কৃতি পরিবর্তন করা কঠিন। কিন্তু ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে ছোট ছোট পদক্ষেপ মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং কর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বা ‘রেজিলিয়েন্স’ বাড়াতে পারে।