দিন শেষে সোফায় বসে সবে টিভিতে পছন্দের অনুষ্ঠান চালিয়েছেন কিংবা বইয়ে চোখ রেখেছেন। ওমনি ভারী হয়ে আসে চোখ, ঘুমে ঢলে পড়তে থাকেন। অগত্যা দেরি না করে বিছানায় দিকে এগোলেন। কিন্তু এ কী মুশকিল! বিছানায় শোওয়ার পরই বেপাত্তা ঘুম। তবে শুধু আপনি নন, অনেকের কাছেই এটি রোজকার সমস্যা। কিন্তু কেন এমন হয় বলুন তো? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে মস্তিষ্কের অভ্যাস, মানসিক চাপ এবং শরীরে পরিবেশের প্রভাব।
আসলে ঘুম শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের সঠিক বিশ্রামের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সোফায় বসলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আরাম অনুভব করি। হালকা আলো, টিভি দেখা, পরিবারের সঙ্গে শান্ত সময়-সব মিলিয়ে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। সোফা হল এমন একটি জায়গা যেখানে আমরা সাধারণত চাপ বা দায়িত্ব কম অনুভব করি। তাই চোখ স্বাভাবিকভাবেই ভারী হয়ে আসে এবং ঘুমের প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু বিছানার ক্ষেত্রে তা হয় না।
বিছানা মূলত ঘুমের জন্য নির্ধারিত জায়গা। যখন আমরা শুতে যাই, মস্তিষ্কে স্বাভাবিকভাবেই চাপ কাজ করে, 'আমি কি ঘুমাতে পারব?' বা 'ঘুম ঠিক আসছে কি না?'-এই চিন্তা ঘুমের পথে বাধা দেয়। তাই অনেক সময়ে শরীর ক্লান্ত হলেও ঘুম আসে না।
আমাদের মস্তিষ্ক অভ্যাসের মাধ্যমে শেখে। বিছানায় ঘুম না এলে ফোন দেখা, টিভি চালানো বা চিন্তা-ভাবনার জন্য ব্যবহার করা হয়, মস্তিষ্ক তখন বিছানাকে ঘুমের জায়গা হিসেবে চিনতে পারে না। ফলে শুতে গেলেও ঘুম আসে না। আর সোফা কোনও নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যবহার করা হয় না, তাই মস্তিষ্ক সেখানে শুধু 'আরাম ও বিশ্রাম'-এর ইঙ্গিত পায়। এই কারণে সোফায় বসলে ঘুম আসা সহজ হয়।
কখন সাবধান হওয়া উচিত? যদি কেউ নিয়মিতভাবে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েন কিন্তু বিছানায় যাওয়ার ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুমাতে না পারেন, রাতে জেগে ওঠা বা দিনভর ক্লান্তি। এগুলো হতে পারে অনিদ্রার লক্ষণ। এমন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চিকিৎসকদের মতে, কিছু অভ্যাস বদলে দিলে বিছানায় ঘুম আসা অনেক সহজ হয়ে যায়। যেমন বিছানাকে শুধু ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যবহার করুন। ফোন, টিভি বা অন্য কাজের জন্য নয়। রাতে ঘুমানোর সময় ঠিক রাখুন। ঘুমের আগে আলো কমানো ও স্ক্রিন বন্ধ রাখুন। শুতে যাওয়ার আগে শরীর ও মন শিথিল করতে হালকা ধ্যান বা শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে বিছানা ঘুমের সঠিক জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
