আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুবপ্রজন্মের স্টাইল স্টেটমেন্টে এখন ট্যাটু এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শরীরের নানা অংশে শিল্পের নিপুণ ছোঁয়া যেন হয়ে উঠেছে আত্মপরিচয়ের রঙিন অভিব্যক্তি। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন এক তথ্য, যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে চিকিৎসক মহলে। গবেষকদের মতে, ট্যাটুর কালি শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

গবেষণাটি হয়েছে ডেনমার্কে। যমজ ভাইবোনদের উপর করা হয়েছে পরীক্ষাটি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ট্যাটু আছে এমন ব্যক্তিদের ট্যাটু না থাকা ভাই বা বোনের তুলনায় লিম্ফোমা ও ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশ কয়েকগুণ বেশি। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউড বিজ্ঞান পত্রিকা বিএমসি পাবলিক হেলথ-এ।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ট্যাটুর কালি ত্বকে প্রবেশ করার পর তা শুধু ত্বকের নিচেই থাকে না। ক্রমশ সেই কালি শরীরের লসিকা গ্রন্থি ও রক্তপ্রবাহেও ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে যাঁদের বড় আকারের ট্যাটু রয়েছে (হাতের তালুর চেয়েও বড়) তাঁদের মধ্যে লিম্ফোমার ঝুঁকি প্রায় তিন গুণ বেশি আর ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা প্রায় চার গুণ বেশি বলে ধরা পড়েছে গবেষণায়। চিকিৎসকদের মতে, বিশেষত কালো রঙের ট্যাটুর কালি বেশি বিপজ্জনক। কারণ এই কালি তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলির মধ্যে আরোমেটিক হাইড্রোকার্বনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক থাকে।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই কালি শরীরে জমা হওয়ার পর ত্বকে এক ধরনের মৃদু কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। এই দীর্ঘস্থায়ী ইনফ্ল্যামেশন থেকেই কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হতে পারে, যা পরবর্তীকালে ক্যানসারের রূপ নেয়।
এই গবেষণার অন্যতম লেখক অধ্যাপক সেবাস্তিয়ান ক্লেমেনসেন বলেছেন, “আমরা মনে করি, ট্যাটুর কালির উপাদানগুলি সম্পর্কে আরও স্বচ্ছতা আনা এবং সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার সময় এসেছে। এই শিল্পের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে জনসচেতনতা মূলক প্রচার করা খুবই জরুরি।”

চিকিৎসক মহলও মনে করছেন, এই বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন। কারণ এই প্রাথমিক ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক। অন্য একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটি বড় অংশ কমবেশি ট্যাটু করেছেন বা ভবিষ্যতে করাতে চান। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্যাটু করানোর আগে কালি কী উপাদানে তৈরি, সেটি যাচাই করে নেওয়া এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন ট্যাটু স্টুডিওতে যাওয়া খুবই জরুরি।

সবমিলিয়ে ট্যাটু কি ক্যানসারের কারণ? তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে এখনও সময় লাগবে ঠিকই। তবে নতুন এই গবেষণায় দেখা দিয়েছে বড় আশঙ্কা। স্টাইলের মোড়কে কি লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি? উত্তর দেবে সময়ই।