আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাংসাশী হয়ে উঠছে কাঠবিড়ালি, শিকার করছে অন্য প্রাণীও। এমনই আশ্চর্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার কাঠবেড়ালিদের মধ্যে। গোটা বিষয়টি এতই আশ্চর্যজনক আচরণগত পরিবর্তন, যে চমকে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। এমনকী রীতিমতো শিকার করে খেতে দেখা গেছে কাঠবেরালিগুলিকে।
 
 আমেরিকার ব্রায়োনেস রিজিওনাল পার্কে একটি ১২ বছরব্যাপী গবেষণায় জানা গিয়েছে এই ঘটনা। সাধারণভাবে কাঠবেড়ালি ছোট্ট, চঞ্চল। গাছের এই ডাল থেকে ওই ডালে দৌড়ে বেড়ায় সর্বক্ষণ। এমনকী রামায়ণে রামও এই প্রাণীকে বেশ পছন্দ করতেন। সেই প্রাণীই এমন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল কীভাবে? এই প্রশ্নই ঘুরছে সকলের মনে।
 
 আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
 
 
 গবেষকরা দেখেছেন, এই কাঠবেড়ালিগুলি রীতিমতো ছোট ইঁদুরদের তাড়া করছে। ধরতে পারলে ঝাঁকিয়ে সেগুলিকে মেরে ফেলছে। এমনকি সদ্য ধরা শিকার নিয়ে একে অপরের সঙ্গে লড়াইও করছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, কাঠবিড়ালিরা মূলত তৃণভোজী প্রাণী হিসেবেই পরিচিত বটে। কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে সর্বভুক প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এই ধরনের শিকারীসুলভ আচরণ এই প্রথমবার বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে নথিভুক্ত হল।
 
 গবেষকদের ধারণা, এই  আচরণের নেপথ্যে এক নয়, একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে মূল যে তত্ত্বটি সামনে আসছে সেটি হল, সম্প্রতি ওই অঞ্চলে ইঁদুরের সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে সেগুলি কাঠবেড়ালিগুলির জন্য প্রোটিনের একটি সহজলভ্য উৎস হয়ে উঠেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই গবেষণা প্রমাণ করে যে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ প্রাণীরাও কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হচ্ছে, তাই হয়তো বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।
 
 প্রধান গবেষক জেনিফার স্মিথ মন্তব্য করেছেন, “আমরা সারাক্ষণই কাঠবিড়ালির মতো প্রাণীদের দেখি, কিন্তু এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা এখনও তাদের সম্পর্কে কত কম জানি।” একই কথা জানাচ্ছেন অন্যান্য জীববিজ্ঞানীরাও। এই গবেষণা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, আমাদের আশেপাশের অতিপরিচিত বন্যপ্রাণীরাও আমাদের অবাক করে দিতে পারে।
 
 
গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময়ের পাশাপাশি দুশ্চিন্তাও দেখা দিয়েছে একদল বিজ্ঞানীর মনে। জলবায়ুর পরিবর্তন যদি এমন নিরীহ প্রাণীর আচরণে এহেন মারাত্মক বদল আনতে পারে তাহলে অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও এই পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিবর্তনের ধারা প্রাণীজগৎকে কোনদিকে নিয়ে যায় তাই নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজ্ঞানীদের কপালে। যদি বৃহত্তর ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন আসে তবে মানবজাতির উপর তার কেমন প্রভাব পড়বে তাই নিয়েও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
