আজকাল ওয়েবডেস্কঃ মাত্র ৪২ বছর বয়সে থমকে গিয়েছে শেফালি জারিওয়ালার জীবন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ‘কাঁটা লাগা গার্ল’-এর। নিয়মিত শরীরচর্চা করা, নিয়মে থাকা শেফালি কীভাবে মাত্র ৪২ বছর বয়সে প্রাণ হারালেন, তা নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর কারণ কি অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা? শেফালির ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অভিনেত্রী পূজা ঘাই দাবি করেছেন, মৃত্যুর দিন শেফালি আইভি ড্রিপ নিয়েছিলেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শেফালি প্রায় এক দশক ধরে অ্যান্টি এজিং ইনফিউশন এবং ওষুধ সেবন করতেন। মৃত্যুর দিন শেফালি ধর্মীয় কারণে উপবাস করেছিলেন শেফালি। তবুও বিকেলে এই ইনজেকশন নেন। তবে কি শেফালির মৃত্যুর পিছনে আইফি ড্রিপ? কতটা বিপজ্জনক এই পদ্ধতি? তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
কী এই আইভি ড্রিপ
শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজের ঘাটতিই নিমেষে মেটাতে পারে আইভি বিউটি ড্রিপ। রোগীর শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শিরায় চ্যানেল করে স্যালাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর তরল সরাসরি রক্তে প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত সহজে রক্তের মাধ্যমে কোষে মেশে এমন ক্রিস্টালয়েড সলিউশন অর্থাৎ ছোট মলিকিউলের তরল দেওয়া হয়। ফলে শরীর সব পুষ্টি তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ঝড় তুলেছে এই থেরাপি। আইভি বা ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপের মাধ্যমে একেবারে শিরায় তরল, পুষ্টি ও ওষুধ সরাসরি রক্তপ্রবাহে সরবরাহ করানো হয়। দেশ-বিদেশের তারকারা তো বটেই, বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আইভি ড্রিপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কীভাবে কাজ করে
আইভি বিউটি ড্রিপ শরীরে যেমন পুষ্টির ঘাটতি মেটায়, তেমনই ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। আসলে এই থেরাপিতে সরাসরি রক্তে দেওয়া হয় ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আর নানা পুষ্টিকর উপাদান। ফলে শরীর দ্রুত সেই পুষ্টিগুলো শোষণ করতে পারে। ওষুধ কিংবা অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি ত্বক হয়ে ওঠে সতেজ, জেল্লাদার। চুল পড়া, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ, শরীরের কোনও ব্যথা ইত্যাদি থেকেও মুক্তি দিতে পারে আইভি ড্রিপ।সার্বিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কারা এই থেরাপি নিতে পারেন
১৮ বছর বয়সের পরে যে কেউ এই থেরাপি নিতে পারেন। শুধু গোটা শরীরের ত্বকের জেল্লা বাড়ানোই নয়, একাধিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যেও এটি সুফল দিতে পারে। কারওর ত্বকে জেল্লা দরকার হলে, খেলোয়াড় কিংবা যে কারওর শরীরে এনার্জি কম অনুভূত হলে, শরীরে কোনও পুষ্টির অভাবে ক্লান্তিবোধ করলে, মনোপজের পরে শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি হলে, সার্বিকভাবে দৈহিক শক্তি কম থাকলে কিংবা শরীরে আরও অনেক প্রয়োজনে আইভি ড্রিপ থেরাপি কার্যকরী। সাধারণত ৫-৬ বার সেশন নিতে হয়। এরপর শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে সেশন চালিয়ে যেতে হয়। তবে উপকার পেতে হলে নিয়মিত করতে হবে এই থেরাপি।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রিপ থেরাপির ফলে ক্ষত, শিরা ফুলে যাওয়া, ইনজেকশনের জায়গায় সংক্রমণ বা অ্যালার্জির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অতিরিক্ত মাত্রা, বিশেষ করে এ, ডি, ই এবং কে- এর মতো ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিনের কারণে বিষাক্ততা দেখা দিতে পারে। তাই আইভি ড্রিপ দেওয়ার আগে রোগী এটি নেওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা সেবিষয়ে পরীক্ষা করা হয়। বেশ কয়েকটি টেস্ট করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
সকলের জন্য কি উপযুক্ত
আইভি থেরাপি সকলের জন্য সঠিক নয়। কিডনি রোগ, হৃদরোগ বা কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগলে র ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসক, পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া আইভি ড্রিপ নেওয়া ঠিক নয়। শরীরের বিশেষ কোনও ক্রনিক রোগ যেমন কিডনি, হার্ট, অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে তা থেরাপি নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান। একইসঙ্গে থেরাপি নেওয়ার পরে যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলেও দ্রুত সেবিষয়ে জানানো উচিত।
