আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। এই নদীখাত গভীরতা এবং জীববৈচিত্রের জন্য সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় একটি গন্তব্য। এবার সেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মাটিতেই খোঁজ মিলল এমন এক প্রাণীর যা চমকে দিয়েছে তাবড় তাবড় গবেষকদের। কোটি কোটি বছর আগের সেই ভয়াল শিকারির জীবাশ্ম দেখে চোখ কপালে গবেষকদের।

আরও পড়ুন: গাড়ির মধ্যেই ‘অপারেশন থিয়েটার’! লিঙ্গবৃদ্ধির নামে ইন্টারনেট দেখে এ কী করতেন হাতুড়ে ডাক্তার? চোখ কপালে পুলিশের

আজ থেকে প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে, আমেরিকার অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ছিল এক সুবিশাল সমুদ্র। আর সেই সমুদ্রের গভীরে বাস করত নানা বিচিত্র প্রাণী। সম্প্রতি তারই মধ্যে আবিষ্কৃত হল এক নতুন ধরনের ‘পেনিস ওয়ার্ম’ বা শিশ্ন কৃমি। যার মুখে ছিল অসংখ্য গোলাকার দাঁতের বলয়।

 

শিশ্ন কৃমি এক বিশেষ ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী, যাদের আকৃতি পুরুষাঙ্গের মতো। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এদের ২০টিরও বেশি প্রজাতি থাকলেও, আরও অসংখ্য প্রজাতির কালের নিয়মে অবলুপ্ত। নতুন আবিষ্কৃত প্রাণীটি সেই লুপ্ত প্রজাতিরই। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে জীবাশ্মের সন্ধানে গিয়ে এক গবেষক এটি খুঁজে পান। ‘স্টার ওয়ার্স’ ছায়াছবিতে বালি খুঁড়ে বেরিয়ে আসত অতিকায় দৈত্য। নাম ‘ক্রেট ড্রাগন’। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে গবেষক ওই কৃমির নামকরণ করেছেন ‘ক্রেটড্রাকো স্পেকটেটাস’। প্রাণীটির বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক জার্নালে।

 

গবেষকদের বিশ্বাস, এই কৃমিটি এক বিশেষ ধরনের গলা বা শুঁড় ব্যবহার শিকার করত। এই শুঁড় গলার বাইরে বেরিয়ে এসে পেঁচিয়ে ধরত শিকারকে, তারপর মুখের ভিতরে ঢুকে যেত। আর মুখেই ছিল সারি সারি ধারালো দাঁত। গবেষকদের অনুমান, দাঁতগুলি মূলত দুই ধরনের ছিল। কিছু ছিল অত্যন্ত ধারালো, আর কিছু ছিল পাখির পালকের মতো সূক্ষ্ম। সম্ভবত দু’ধাপে খাবার হজম করত কৃমিটি। 

একটি পূর্ণবয়স্ক ‘ক্রেটড্রাকো’ লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৬-৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত হত। বর্তমানে যে সমস্ত শিশ্ন কৃমি টিকে আছে, তাদের তুলনায় এটি বহুগুণ বড়। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তনের ফলে আধুনিক প্রজাতিগুলি আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে তাদের দৈর্ঘ্য ২ থেকে ৩ মিলিমিটারের বেশি হয় না। বিজ্ঞানীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই শিশ্ন কৃমির দাঁতের গঠন। তবে তবে ওই একই অভিযানে আরও বেশ কিছু প্রাণীর জীবাশ্ম মিলেছে। আনুমানিক ৫০ কোটি বছর আগে, অর্থাৎ কেমব্রিয়ান যুগের (যাকে বিশেষজ্ঞরা জটিল প্রাণীজগতের ঊষালগ্ন বলে মনে করেন) সূচনাকালের এই জীবাশ্মগুলিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাণীগুলির মধ্যে রয়েছে আদিম প্রজাতির চিংড়ি এবং শামুক। বিশ্বের প্রথমদিকের শিকারি বা খাদক প্রাণীরা দেখতে কেমন ছিল, সে বিষয়ে এই জীবাশ্মগুলি মূল্যবান তথ্য জোগাতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।