বকুলতলা থেকে বটতলা... আজ ভিড় জমবেই সর্বত্র। মেলা বসেছে যে! রথের মেলা। আমি, তুমি, সে— আজ সবারই মন চাইবে দেখতে যেতে। সেই ছোট্টবেলার মতো। বিশাল কাঠের রথের সাজগোজ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া, তার রশিতে টুক করে একটু হাত ছোঁয়ানো, বৃষ্টিভেজা নাগরদোলার ঘুরপাক, বাহারি পুতুল, পাঁপড়ভাজা, জিলিপি— বড়দের হাত ধরে, ছাতা মাথায় রথের মেলায় টইটইয়ের স্মৃতি নেহাত কম নাকি!
ব্যস্তসমস্ত, ট্রাফিকে ধস্ত কলকাতার বুক থেকে একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে মেলার মজা। যদি বা থাকে, তা-ও আড়েবহরে কম, কিংবা দিনে। আনন্দেও। তবু তার মধ্যে গুটিকয়েক মেলার আকর্ষণ আজও অটুট। রথের মেলা নিঃসন্দেহে সেই তালিকায়। কলকাতা পেরিয়ে শহরতলি, তা পেরিয়ে জেলার দিকে এগোলে অবশ্য এখনও তার রমরমা অনেকটাই।
বৃষ্টি হোক বা না হোক, রথের মেলার মজায় মাতবেন নাকি? কলকাতা থেকে শহরতলির কিছু জনপ্রিয় মেলার হদিশ জেনে নিন আগেভাগে।
- ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড – মহা ধুমধাম, জাঁকজমকে শোভাযাত্রার পরে কলকাতা ইস্কনের বিশাল রথ রাখা হয় এখানেই। ময়দানে তাকে ঘিরে জমজমাট মেলা থাকবে উল্টোরথ পর্যন্ত। ইস্কনের তরফে থাকবে ভোগপ্রসাদ বিতরণের আয়োজনও।
- সল্টলেক-করুণাময়ী – পনেরো দিন টানা মেলা চলবে করুণাময়ীর সেন্ট্রাল পার্ক মেলা গ্রাউন্ডে। রথের মেলা নিজস্ব আকর্ষণ তো থাকছেই, সঙ্গে হরেক রকম স্টলে দেদার কেনাকাটার সুযোগ। রোজই থাকবে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
- বাগবাজার – উত্তর কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় রথের মেলার ঠিকানা বাগবাজার ময়দানে। খাওয়াদাওয়া থেকে সাজগোজ, নাগরদোলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবই থাকে তার ভাঁড়ারে।
- রুবি মোড়ের কাছে – রুবি হাসপাতাল মোড়ের কাছে এই মেলা চলে প্রায় এক মাসের কাছাকাছি। নানা ধরনের দোকানে বিকিকিনিতে সরগরম হয়ে থাকে গোটা এলাকা।
- কসবা রথতলা মিনিবাস স্ট্যান্ড – এখানে মেলা চলে দিন পনেরো। পাঁপড়ভাজা, জিলিপি, কটকটি, খেলনা-সহ হরেক মজার টানে আট থেকে আশি দলে দলে যোগ দেয় প্রতি বছরই।
- চেতলা – আগে জমাটি রথের মেলা বসত রাসবিহারীর মোড়ে। ভিড়, জ্যাম এড়াতে তা সরে এসেছে চেতলা ব্রিজের নীচে। চলে প্রায় ১৫ দিন।
- নাকতলার রথতলা – গীতাঞ্জলি মেট্রো থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার দু’ধারে বসা এই মেলা বহু বছরের পুরনো। তবে এখন শুধু রথ আর উল্টো রথের দিনেই বসে মেলা। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সারি সারি দোকানে নানা রকম গাছের বিকিকিনি।
- টালিগঞ্জের কবরডাঙা- এখানে মেলার আয়োজন আজও জমজমাট। চলে টানা দিন পনেরো।
- ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে – এখানেও মেলা চলে দিন পনেরো। খাবার, পোশাক, গয়নাগাঁটি, নাগরদোলার আকর্ষণে ভিড় জমে যথারীতি।
- চিড়িয়া মোড় – বিটি রোডের উপরে চিড়িয়া মোড়ের কাছে রাস্তার দুই ধারে সারি সারি দোকান সাজিয়ে মেলা বসে। তবে শুধুমাত্র রথের দিনেই তার আয়োজন।
- নাগেরবাজার – নাগেরবাজার মোড় থেকে যশোর রোডের দু’পাশে বসে এক দিনের রথের মেলা।
- এয়ারপোর্ট ১ নং গেট – দমদমের গোরাবাজার থেকে রথ টানার পরে এখানে জমজমাট মেলা চলে বেশ কয়েকদিন।
- মহাজাতি নগর, বিরাটি – এখানে আজও মহা ধুমধামে মেলা হয়। নাগরদোলা, খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটা— বাদ থাকে না কিছুই।
- হরিনাভি – রাজপুরের কাছে হরিনাভিতে জাঁকজমক করেই মেলা হয় আজও। বহু পুরনো এই মেলায় প্রতি বছরই থাকে যাবতীয় আনন্দের উপকরণ।
এবার অবশ্য জেলার মেলার আকর্ষণ ঢের বেশি! দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরে এবছরই প্রথম রথযাত্রা। সূচনা করবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকছে জমজমাট মেলার আয়োজন। সব রকমের স্টলে কেনাকাটার হরেক পসরা, নাগরদোলা, পেটপুজো, সবই আছে তালিকায়।
জেলার আর এক ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা হয় মহিষাদল রাজবাড়ির আয়োজনে। ছশো বছর পার করে ফেলা এই মাহেশের রথ দেখতে আজও ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। মহা আড়ম্বরে রথযাত্রার পরে মেলার আকর্ষণও থাকে জমাটি।
হুগলির গুপ্তিপাড়াতেও রথের মেলা বসে বহু বছর ধরে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ট্রেনে, বাসে এসে মানুষ ঘুরে যান এই মেলায়।
বালুরঘাটের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আয়োজনে রথের মেলার ইতিহাসও দীর্ঘ বছরের। সময়ের হাত ধরে এখন তা আড়েবহরে অনেকটাই ছোট। তবু মানুষ ভিড় জমান তার সেকেলে গন্ধের টানে।
