আজকাল কর্মব্যস্ততার জীবনে অল্প বয়সেই জাঁকিয়ে বসছে বিভিন্ন অসুখ। প্রভাব পড়ছে যৌন জীবনেও। দেশে দ্রুত বাড়ছে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা। অকালেই তলানিতে ঠেকছে শুক্রাণু-ডিম্বাণুর পরিমাণ, গুণমান৷ নারী-পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে ঠিকই, তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ইদানীং সন্তান না হওয়ার প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে দায়ী পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সিগারেট বা অ্যালকোহল নয়, আরও বহু অজানা ও অবহেলিত কারণে কমছে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা। 

১. বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  আধুনিক জীবনযাপন পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। দীর্ঘ সময় বসে কাজ, নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার এবং পুষ্টির ঘাটতি-এসব মিলেই শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, শুক্রাণুর উৎপাদন এবং গুণগত মান দুইই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২. আরেকটি বড় কারণ হল পরিবেশ দূষণ। প্লাস্টিক, কীটনাশক, শিল্প কারখানার রাসায়নিক পদার্থ কিংবা ভারী ধাতুর সংস্পর্শ-এসবই ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর’ হিসেবে কাজ করে, যা সরাসরি শুক্রাণুর মান নষ্ট করে। গবেষকরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্বাস-প্রশ্বাস বা খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে হরমোন ব্যালেন্স নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ কোলে রেখে কাজ করা, হট-বাথের মতো অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শও শুক্রাণু উৎপাদন কমিয়ে দেয়।

৩. মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন, ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের মতো হরমোনজনিত সমস্যা-এসবও গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চিকিৎসকদের মতে, মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল বেড়ে গেলে সরাসরি শুক্রাণুর মান কমে যেতে পারে।এছাড়া অনেক পুরুষের অজান্তেই থাকতে পারে টেস্টিকুলারের ইনফেকশন, পুরনো অস্ত্রোপচারের জটিলতা, ভ্যারিকোসিল বা জিনগত সমস্যা-যা সময়মতো পরীক্ষা না করলে ধরা যায় না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব এখন একটি নীরব মহামারি। তবে আগেভাগে পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার এবং রাসায়নিক সংস্পর্শ কমাতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই সমস্যা লুকিয়ে নয়, সচেতনতার মাধ্যমেই প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব।