আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্নেক প্ল্যান্ট বা ড্রাসিনা ট্রাইফাসিয়াটা, যা জনপ্রিয়ভাবে ‘মাদার-ইন-ল’স টাং’ নামে পরিচিত, বর্তমানে ঘরবাড়ি ও অফিসে অন্যতম প্রিয় ইনডোর গাছ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। সহজ যত্নে বাঁচিয়ে রাখা যায় বলে এটি উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর আরেকটি বড় গুণ হল বায়ু পরিশোধনের ক্ষমতা, যা ঘরের পরিবেশকে সতেজ রাখে এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
সম্প্রতি এই গাছের জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর দামও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন ও অফলাইন—দু’জায়গাতেই এখন এটি তুলনামূলকভাবে দামী হয়ে উঠেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম নিয়ে চিন্তার তেমন কারণ নেই। এই গাছ সহজেই বাড়ানো যায়, তাই কারও কাছ থেকে একটি মাত্র পাতা পেলেও নতুন গাছ তৈরি সম্ভব।
স্নেক প্ল্যান্টের যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আলো ও জল দেওয়া। এটি কম বা মাঝারি আলোর পরিবেশে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, ফলে সূর্যালোক সীমিত ঘর বা অফিসের কোণে রাখলেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে একেবারে অন্ধকারে রাখলে গাছের বৃদ্ধি থেমে যেতে পারে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত জল দেওয়া এই গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু, কারণ এর মূল সহজেই পচে যায়। সঠিক যত্নের জন্য মাটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে তবেই জল দেওয়া উচিত। আবহাওয়া ও ঋতুভেদে প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহ অন্তর একবার জল দিলেই যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: চুমুর আমি, চুমুর তুমি, চুমু দিয়েই যায় চেনা? চুমু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অবাক করা দাবি!
এই গাছের জন্য রসালো বা ‘সাকুলেন্ট’ প্রজাতির মাটির মিশ্রণ সবচেয়ে উপযোগী, কারণ এতে সহজে জল নিষ্কাশন হয় এবং মূল পচে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও স্নেক প্ল্যান্ট খুব বেশি দাবিদার নয়। বছরে এক বা দুইবার, বিশেষ করে বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকালে, অল্প পরিমাণ তরল সার মিশিয়ে দিলে গাছ ভালো থাকে।
তাপমাত্রার দিক থেকে এটি মাঝারি পরিবেশে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছটি সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডা বাতাস বা শীতল ড্রাফট থেকে এটি দূরে রাখা উচিত।
যদি দেখা যায় গাছের পাতা হলদে হয়ে যাচ্ছে বা নরম ও পচা ভাব দেখা দিচ্ছে, তবে বুঝতে হবে অতিরিক্ত জল দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় জল দেওয়া বন্ধ করে গাছের টবের নিচে যথাযথ নিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
গাছটি সহজে ছড়ানো যায় বলেই এর জনপ্রিয়তা এত বেশি। একটি সুস্থ পাতা কেটে ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা করে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিলে প্রতিটি অংশ থেকেই নতুন গাছ জন্মাতে পারে। প্রতিটি অংশের নিচের দিকটি প্রায় ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া যায়। এক সপ্তাহ পর হালকা জল দেওয়া উচিত এবং পরবর্তীতে মাসে একবার জল দিলেই যথেষ্ট। সাধারণত এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই নতুন মূল গজাতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্নেক প্ল্যান্টের সবচেয়ে বড় গুণ এর অভিযোজন ক্ষমতা। এটি কম আলো, কম জল, এমনকি সীমিত যত্নেও টিকে থাকতে পারে। ঘরের অন্ধকার বারান্দা, করিডর বা বাথরুমের মতো জায়গাতেও এটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, যেখানে সাধারণত অন্য গাছ বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। তাই ইনডোর গার্ডেনিংয়ে নবীন থেকে অভিজ্ঞ—সব ধরনের উদ্ভিদপ্রেমীর ঘরে স্নেক প্ল্যান্ট থাকা উচিত বলেই মনে করছেন উদ্ভিদবিশারদরা।
