আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম ছুটে চলা। অফিসের ডেডলাইন, বাড়ির দায়িত্ব, সামাজিকতা রক্ষা- সব মিলিয়ে দিনশেষে মনে হয়, নিজের জন্য এক মুহূর্তও সময় নেই। প্রযুক্তির আশীর্বাদে জীবন সহজ হওয়ার কথা থাকলেও, প্রযুক্তির হাত ধরে আজ আমরা যেন আগের চেয়েও বেশি ব্যস্ত। এই ইঁদুরদৌড়ের জীবনে দাঁড়িয়ে অনেকেই অবাক হয়ে ভাবেন, এলন মাস্ক বা মুকেশ অম্বানীদের মতো সফল ব্যক্তিরা এত কিছু সামলানোর সময় পান কীভাবে? তাঁদের দিনও তো ২৪ ঘণ্টারই। তাঁদের হাতে কি কোনও জাদুর কাঠি আছে?
 
 বিশেষজ্ঞদের মতো, এর নেপথ্যে কোনও জাদু নেই, আছে বিজ্ঞানসম্মত কৌশল, কঠোর শৃঙ্খলা এবং কিছু পরীক্ষিত অভ্যাস। সফল ব্যক্তিরা সময়ের পিছনে ছোটেন না, বরং সময়কে নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করেন। তাঁদের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে টাইম ম্যানেজমেন্টের কয়েকটি অব্যর্থ সূত্র।
 
 
১। কাজের গুরুত্ব বোঝা: সাধারণ মানুষ সারাদিনের কাজের এক লম্বা তালিকা বা ‘টু-ডু লিস্ট’ তৈরি করেন। কিন্তু সফল ব্যক্তিরা তার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ভাবেন। তাঁরা আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স বা পারেটো নীতির মতো কৌশল ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, কোন কাজটি ‘জরুরি’ এবং কোনটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’, তা আগে বিচার করেন। কোনও কাজ আপাত দৃষ্টিতে জরুরি মনে হলেও আদৌ সেগুলি জরুরি নয়, আবার কিছু কাজ সবার আগে সেরে ফেলা জরুরি। সফল ব্যাক্তিরা দ্বিতীয় গোত্রের কাজগুলিতেই বেশি মনোযোগ দেন। দিনের শুরুতে এনার্জি বেশি থাকে। মনোযোগ ভাল থাকে। ফলে তাঁরা দিনের শুরুতেই সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সেরে ফেলেন, যা তাঁদের সারাদিনের জন্য মানসিক ভাবে এগিয়ে রাখে।
 
 ২. ‘টাইম ব্লকিং’: সাধারণত সফল ব্যাক্তিরা মাল্টিটাস্কিং বা এক সঙ্গে অনেক কাজ করায় বিশ্বাসী নন। বরং তাঁরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কাজেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন, যাকে বলে ‘ডিপ ওয়ার্ক’। দিনের কোন সময়ে কোন কাজটি করবেন, তা ক্যালেন্ডারে আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে। ধরা যাক, সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কাজ করবেন। এই দুই ঘণ্টায় তাঁদের কাছে ওই কাজটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জরুরি জিনিস। এই সময়ে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় মিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেলের নোটিফিকেশন থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ দূরে রাখেন। এর ফলে অল্প সময়ে অনেক বেশি নিখুঁত কাজ করা সম্ভব হয়।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 ৩. ‘না’ বলার অভ্যাস: সফল মানুষেরা তাঁদের সময়ের মূল্য বোঝেন। তাই তাঁরা বিনয়ের সঙ্গে ‘না’ বলতে জানেন। যে কোনও অনুরোধ, মিটিং বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে তাঁরা বিচার করেন, সেই কাজটি তাঁদের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কি না। যদি উত্তর ‘না’ হয়, তবে তাঁরা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে দ্বিধা করেন না। সবাইকে খুশি করতে গিয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়াকে সময়ের অপচয় বলেই মনে করা হয়।
 
 ৪. পরিকল্পনা এবং পর্যালোচনা: তাঁদের প্রতিটি দিনই পরিকল্পিত। আগের দিন রাতেই পরের দিনের কাজের একটি রূপরেখা তৈরি করে রাখা হয়। এতে সকাল থেকে কী কী করতে হবে বা কোনটি আগে কোনটি পরে করতে হবে, সেই নিয়ে কোনও দ্বিধা থাকে না। শুধু তাই নয়, সপ্তাহ বা মাসের শেষে তাঁরা নিজের কাজের পর্যালোচনা করেন। কোথায় সময় বেশি নষ্ট হল, কোন কৌশলটি কাজ করল না করল না, এই বিশ্লেষণ তাঁদের আগামী দিনের পরিকল্পনাকে আরও নিখুঁত করে তোলে।
 
 সব মিলিয়ে বলা যায়, টাইম ম্যানেজমেন্ট কোনও জন্মগত প্রতিভা নয়, বরং একটি অভ্যাস। এই কৌশলগুলি ছোট ছোট করে নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করলেই দেখবেন, আপনার ২৪ ঘণ্টাও অনেক বেশি দীর্ঘ এবং অর্থপূর্ণ মনে হচ্ছে।
