আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে। মাটিতে কবর খোঁড়ার গর্ত করতে গিয়ে হঠাৎ করেই কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন। কারণ মাটির তলা থেকে উদ্ধার হয় কিছু দেহাবশেষ। কিছুটা মানুষের মতোই দেখতে দেহগুলি। কিন্তু ঠিক যেন মানুষ নয়। তবে সেই দেহাবশেষগুলি কাদের?
পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় দেহগুলি। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা যায় সেগুলি যে সে দেহাবশেষ নয়। সেগুলি আসলে মমি। দেখা যায় সেই মমিগুলির পায়ের পাতা বিভক্ত। আর সেই পাতায় মাত্র তিনটি করে আঙুল! বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরাও। একদল বিজ্ঞানী দাবি করেন, এগুলি সাধারণ মানুষের দেহ নয়, বরং অন্যগ্রহের কোনও প্রাণী বা এলিয়েনদের। অন্যরা বলেন, “অসম্ভব! এ বুজরুকি ছাড়া কিছুই নয়।”
অবশেষে দীর্ঘ তদন্তের পর উঠে এল সত্যি। মার্কিন সাংবাদিক জেসি মিশেলস নিজে গিয়ে পরীক্ষা করলেন মমিগুলি। জেসি জানান, মমিগুলির দেহে বেশ কিছু টিস্যু, পেশি এবং অঙ্গের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করেই সত্যের কাছাকছি পৌঁছানো সম্ভব।
জেসির সাফ কথা, এগুলি মোটেই এলিয়েনের দেহাবশেষ নয়। মমিগুলি মানুষেরই একটি বিরল প্রজাতির। জিনগত মিউটেশন বা পরিবর্তনের কারণে তাঁদের হাত ও পায়ের আঙুলের সমস্যা ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মমিগুলির জিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সেই জিন পরীক্ষা করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেনেটিক্স গবেষক আলাইনা হার্ডি জানান, প্রথমে তাঁরও বিষয়টি অদ্ভুত লেগেছিল। কিন্তু তিনি প্রায় ৫০ টি প্রজন্মের জিনগত পরীক্ষা করেন। তাতেই দেখা যায় জিএলআই ৩ নামের একটি জিনের মিউটেশনের কারণে এই ধরনের অঙ্গ বিকৃতি দেখা যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে পলিডাকটাইলি। এই একই ধরনের বিকৃতি পেরুর প্রাচীন সভ্যতার অন্যান্য অংশেও দেখা যেত। তাছাড়া মমিগুলির জিনের গঠন অবিকল মানুষেরই মতো। কাজেই এগুলিকে এলিয়েন ভাবার কোনও কারণ নেই।
গবেষকরা জানান, উত্তর জিম্বাবোয়েতে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই একই অঙ্গবিকৃতি দেখা যায়। স্থানীয় ভাবে তাকে অস্ট্রিচ ফুট সিনড্রোম বলা হয়। এই রোগে পায়ের একাধিক আঙুল জোড়া লেগে ইংরেজি ভি আকৃতির পায়ের পাতা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
প্রসঙ্গত, গোটা বিতর্কের নেপথ্যে রয়েছে ‘মেক্সিকান নেভি মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জোসে জালসের কিছু বয়ান। জোসে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে তিনি সম্প্রতি ২১ টি মমি নতুন করে পরীক্ষা করেছেন। তাঁর দাবি, মমিগুলিতে আঙ্গুলের ছাপ, হাড়ের কাঠামো, দাঁতের গঠন, পেশী এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই খুঁজে পেয়েছেন তিনি। জোসে আরও দাবি করেন, তাঁর পরীক্ষা করা নমুনাগুলির মধ্যে এমন কিছু মমি রয়েছে, যারা অন্তঃসত্ত্বা। এই ধরনের নমুনা কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা অসম্ভব বলে মনে করেন তিনি। গত ছয় বছর ধরে জালসে এবং তার দল মমিগুলির এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, ফ্লুরোস্কোপি, ডিএনএ পরীক্ষা, ফরেনসিক পরীক্ষা, আঙ্গুলের ছাপ এবং কোষের নমুনা পরীক্ষা করেছেন।
২০২৩ সালেও বিতর্কিত সাংবাদিক জেইম মৌসান ঠিক একই রকম ‘এলিয়েন মমি’ আবিষ্কার করার দাবি করেন। মেক্সিকোর সংসদে গোটা ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। যদিও বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ সেসময়ও জানান, মমিগুলি মোটেই ভিনগ্রহী প্রাণীর নয়। সেগুলি হয় নকল, নয়তো বিলুপ্ত কোনও প্রাণীর দেহাবশেষ।
