নিজের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কে না চান! তবে একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত জরুরি অভ্যাসকে আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি—তা হল বিছানার চাদর পরিবর্তন করা। অনেকেই ভাবেন সপ্তাহান্তে ঘরদোর পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট, চাদর তখনই বদলাতে হবে যখন দৃশ্যমান দাগ বা ময়লা চোখে পড়বে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ চোখে না দেখা ঘাম, মৃত ত্বকের কোষ এবং ধূলিকণা প্রতিদিনই চাদরে জমতে থাকে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত একবার চাদর পরিবর্তন করা উচিত। গরমকালে, যখন ঘাম বেশি হয়, তখন প্রতি তিন থেকে চার দিন অন্তর চাদর বদলানো আরও উপকারী। এতে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ হয়। এই অভ্যাসকে অবহেলা করলে চর্মরোগ যেমন র‍্যাশ, অ্যালার্জি এবং চুলকানি হতে পারে। শুধু তাই নয়, কাপড়ে জমে থাকা ধুলো এবং জীবাণু থেকে শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়ে। অর্থাৎ ঘরের পরিচ্ছন্নতার মতো বিছানার চাদর নিয়মিত বদলানোও স্বাস্থ্য রক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ।

শীতকালে অনেকেই ঘাম কম হয় বলে বিছানার চাদর বদলাতে দেরি করেন। মনে করেন, চাদর পরিষ্কারই আছে। কিন্তু বাস্তবে সব ঋতুতেই আমাদের শরীর থেকে মৃত ত্বকের কোষ ঝরে পড়ে। এই কোষগুলোই ব্যাকটেরিয়া এবং ধূলিকণার জীবাণুর খাদ্য হয়ে ওঠে। ফলে নিয়মিত চাদর না বদলালে সংক্রমণের ঝুঁকি শীতে সমানভাবে থেকে যায়, বরং বেড়েও যেতে পারে।তাই গরম হোক বা শীত, চাদর নিয়মিত বদলানোই সুস্থ এবং নিরাপদ থাকার অন্যতম সহজ উপায়।

যেসব বাড়িতে ছোট বাচ্চা বা পোষা প্রাণী রয়েছে, সেখানে বিছানার চাদর আরও ঘন ঘন বদলানো জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্তত দু’থেকে তিন দিন পরপর চাদর বদলানো উচিত। কারণ বাচ্চাদের খাবারের কণা, পোষা প্রাণীর লোম এবং বাইরে থেকে আসা ময়লা খুব দ্রুত চাদরে জমে যায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর বিস্তার সহজেই ঘটে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই শিশু এবং পোষা প্রাণী থাকা পরিবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়মিত চাদর পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যাদের হাঁপানি, অ্যালার্জি বা সংবেদনশীল ত্বকের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। শুধু বিছানার চাদর বদলালেই যথেষ্ট নয়, সঠিকভাবে ধোয়াটাও সমান জরুরি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, চাদর সবসময় গরম জলে ডিটারজেন্ট এবং অ্যান্টিসেপটিক তরল মিশিয়ে ধোয়া উচিত। এতে কাপড়ে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু ধ্বংস হয়। ধোয়ার পর চাদর রোদে শুকনোই সর্বোত্তম, কারণ প্রাকৃতিক সূর্যালোক একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে।

নিয়মিতভাবে চাদর বদলানো এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার করা শুধু সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির ঝুঁকি কমায় না, বরং বাড়ির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে। পাশাপাশি পরিবারের সকলের জন্য এক ধরনের সতেজ পরিবেশ নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিষ্কার চাদরে ঘুমোলে ঘুমের গুণমানও অনেকটা বেড়ে যায়। শরীর থাকে হালকা এবং সতেজ।

অর্থাৎ বিছানার চাদরকে শুধু শোওয়ার জিনিস ভেবে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। বরং এটিকে আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যবিধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাবতে হবে।