আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহাবিশ্বে কি আমরা একা? রাতের আকাশে তাকিয়ে এই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খেয়েছে যুগ যুগ ধরে। কল্পবিজ্ঞান থেকে অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ- সর্বত্রই চলেছে সেই সম্ভাব্য ভিনগ্রহী প্রতিবেশীর খোঁজ। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিল এক নতুন গবেষণা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গাতেই যদি কোনও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব থাকে, তবে তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব হতে পারে বিপুল, প্রায় ৩৩,০০০ আলোকবর্ষ।
সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত ‘EPSC–DPS2025’ শীর্ষক এক যৌথ বৈঠকে এই গবেষণাপত্রটি পেশ করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফল মহাজাগতিক একাকিত্বের দিকেই জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, শুধু বিপুল দূরত্বই নয়, রয়েছে সময়ের এক বিরাট প্রতিবন্ধকতাও।

দূরত্ব এবং সময়ের বিরাট চ্যালেঞ্জ
গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমাদের নিকটতম কোনও বুদ্ধিমান সভ্যতার অস্তিত্ব থাকতে হলে, সেই সভ্যতাকে ন্যূনতম ২ লক্ষ ৮০ হাজার বছর টিকে থাকতে হবে। এমনকি, এই সময়কাল লক্ষ লক্ষ বছরও হতে পারে। বিষয়টি সহজভাবে বুঝতে গেলে, আমাদের নিজেদের সভ্যতার দিকে তাকাতে হবে। মানব সভ্যতার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের হলেও, প্রযুক্তিগতভাবে আমরা উন্নত হয়েছি মাত্র কয়েকশো বছর। এই সামান্য সময়েই পরমাণু যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মহামারী আমাদের অস্তিত্বকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সেখানে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নিজেদের সভ্যতাকে যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা নিজেদের তৈরি করা সঙ্কট থেকে বাঁচিয়ে রাখা এক প্রায় অসম্ভব কঠিন কাজ।
এই গবেষণার মূল ভিত্তি হল ‘ড্র্যাক সমীকরণ’-এর মতো মহাজাগতিক সম্ভাবনার তত্ত্ব। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মহাবিশ্বে হয়তো অনেক সভ্যতারই জন্ম হয়েছে, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। হয় তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছে, নয়তো কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। ফলে, একই সময়ে কাছাকাছি দু’টি উন্নত সভ্যতার টিকে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
যোগাযোগের সম্ভাবনা কতটা?
গবেষণায় উল্লিখিত ৩৩,০০০ আলোকবর্ষের দূরত্ব কল্পনারও অতীত। এক আলোকবর্ষ মানে হল, আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। অর্থাৎ, ভিনগ্রহীদের সেই সম্ভাব্য ঠিকানা থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছতেই ৩৩,০০০ বছর সময় লেগে যাবে। এর অর্থ, আজ যদি আমরা তাদের উদ্দেশ্যে কোনও বার্তা পাঠাই, তবে সেটি সেখানে পৌঁছবে ৩৩ হাজার বছর পর। তাদের উত্তর পৃথিবীতে আসতে সময় লাগবে আরও ৩৩,০০০ বছর। এই বিপুল সময়ের ব্যবধানে দু’টি সভ্যতার পক্ষেই অর্থপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করা কার্যত অসম্ভব।
বিজ্ঞানীদের এই নতুন তত্ত্ব ‘ফার্মি প্যারাডক্স’-এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দিচ্ছে। পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মির প্রশ্ন ছিল, মহাবিশ্বে যদি কোটি কোটি গ্রহ থাকে, তবে ভিনগ্রহীদের কোনও চিহ্ন কেন আমরা এখনও পাইনি? এই গবেষণা বলছে, চিহ্ন না পাওয়ার কারণ হল- হয় তারা এতটাই দূরে যে তাদের সঙ্কেত আমাদের কাছে পৌঁছয়নি, অথবা তারা আমাদের খোঁজার আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
সুতরাং, ভিনগ্রহীর খোঁজের এই সফর হয়তো আমাদের নিজেদের সভ্যতার আয়ু এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। অন্য কারও সঙ্কেত পাওয়ার আগে আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব লক্ষ লক্ষ বছর টিকিয়ে রাখাটাই হয়তো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
