কথায় বলে, জিভ শরীরের আয়না। যে কোনও অসুখে রোগীর জিভ দেখতে চান চিকিৎসকেরা। জিভ দেখেই বোঝা যায় শরীরে হানা দিয়েছে কোন রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের স্বাস্থ্যের সঠিক খেয়াল না রাখলে জিভের উপর সাদা আস্তরণ পড়ে। জিভের রং বদলের নেপথ্যে রয়েছে আরও অনেক কারণ। এমনকী শরীরের ছোট্ট এই অঙ্গের সঙ্গে হৃদপিণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ হৃদরোগের আভাস দিতে পারে জিভ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। 

গবেষণা বলছে, জিভের রং, আস্তরণ এবং জিভে উপস্থিত জীবাণুর প্রকারভেদ হৃদরোগের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থাকতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জিভের চেহারা সুস্থ মানুষের তুলনায় একেবারেই আলাদা হয়। সেক্ষেত্রে ঠিক কী কী পার্থক্য থাকতে পারে, দেখে নেওয়া যাক-


*রঙের পার্থক্য: সুস্থ ব্যক্তির জিভ সাধারণত ফ্যাকাশে লালচে রঙের হয় এবং এর উপরে হালকা সাদা আস্তরণ দেখা যায়। অন্যদিকে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছেন, তাঁদের জিভ তুলনামূলক বেশি লাল হয়ে থাকে এবং সেখানে সাদা আস্তরণের বদলে হলুদাভ কোট জমে।শরীরে অক্সিজেনের অভাবে জিভের রং হঠাৎ নীলচে বা বেগুনি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, শ্বাসযন্ত্র কিংবা কার্ডিওভাসকুলার কোনও সমস্যা থাকলেও জিভের রং নীল হয়ে যেতে দেখা যায়। 

আরও পড়ুনঃ নিঃশব্দে হাত-পায়েও দেখা যায় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ! কোন কোন উপসর্গ দেখলে বুঝবেন ঘনিয়ে আসছে চরম বিপদ?

*জীবাণুর ভূমিকাঃ শুধু রঙই নয়, জিভের উপরিভাগে থাকা জীবাণুর গঠনেও মিলেছে তফাৎ। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগীদের জিহভে বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। সুস্থ ব্যক্তিদের জিভে সেই জীবাণু তেমন থাকে না। যা থেকে গবেষকরা অনুমান করেছেন, জিভের ব্যাকটেরিয়া হৃদরোগের প্রাথমিক ইঙ্গিত বহন করতে পারে।

গবেষকরা ৪২ জন হৃদরোগী ও ২৮ জন সুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে পরীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীরা মুখ, জিভ বা দাঁতের কোনও সংক্রমণে ভুগছিলেন না এবং সাম্প্রতিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক বা ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ ব্যবহার করেননি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, ব্রেকফাস্টের আগে ও দাঁত মাজারও আগে স্টেইনলেস স্টিলের চামচ দিয়ে তাঁদের জিভের আস্তরণ সংগ্রহ করা হয়। পরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবাণুগুলোর ধরন বিশ্লেষণ করা হয়। 


সময়ের সঙ্গে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। হৃদরোগ ঠেকাতে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে দাবি গবেষকদের। তাঁদের মতে, হৃদরোগের লক্ষণ বুঝতে এটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। জিভের অবস্থার উপর নজর রেখে ভবিষ্যতে হৃদরোগ শনাক্তকরণ, রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এমনকী প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে বড় সতর্কবার্তা পাওয়া যেতে পারে। তবে বিষয়টি আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে গবেষক দল।