তামার বোতলের জল মানেই শরীরের জন্য উপকার, এমন ধারণা অনেকেরই। প্রাচীন আয়ুর্বেদে বলা হয়, তামা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সাহায্য করে এবং জীবাণু নাশ করে। তাই অনেকেই প্রতিদিন সকালে তামার বোতলে রাখা জল পান করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এই অভ্যাস সকলের জন্য নয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি উল্টো শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামা একটি অপরিহার্য খনিজ হলেও এর অতিরিক্ত উপস্থিতি দেহের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে তামার বোতলে জল রাখলে, বিশেষত যদি সেই জল আম্লীয় হয় (যেমন লেবুর পানি, ফলের রস ইত্যাদি), তবে তাতে তামার আয়ন মিশে যায়। অতিরিক্ত তামা শরীরে প্রবেশ করলে তা “কপার টক্সিসিটি” বা তামা বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এর ফলে বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, লিভারের সমস্যা এমনকি কিডনির ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষত যাঁদের কিডনি বা লিভারে আগে থেকেই সমস্যা আছে, তাঁদের তামার বোতলের জল একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এই অঙ্গগুলিই দেহ থেকে অতিরিক্ত তামা ছেঁকে ফেলে। তাদের কার্যক্ষমতা কম থাকলে দেহে তামা জমে গিয়ে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে। এছাড়া 'উইলসন ডিজিজ' নামে এক জেনেটিক অসুখে আক্রান্তদেরও তামার জল সম্পূর্ণভাবে এড়ানো উচিত, কারণ তাঁদের শরীরে তামা জমে যায় এবং তা প্রাণঘাতী হতে পারে। শিশু ও নবজাতকদের ক্ষেত্রেও এই জল দেওয়া ঠিক নয়, কারণ তাদের শরীর এখনো ভারী ধাতু পরিশোধনে সক্ষম নয়।
তবে একেবারে ভয় পাওয়ারও কারণ নেই। যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা যায়, তামার বোতলের জল কিছুটা উপকারও দিতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, কেবলমাত্র বিশুদ্ধ ফিল্টার করা জল বোতলে রাখুন এবং ৬–৮ ঘণ্টার বেশি না রাখাই ভাল। রাতে বোতলে জল ভরে সকালে খাওয়া যেতে পারে। বোতলটি নিয়মিত পরিষ্কার করুন, যাতে তামার উপরিভাগে অক্সাইড বা ময়লা না জমে। কখনও তাতে লেবুর রস বা কার্বনেটেড পানীয় রাখবেন না।
সবশেষে বিশেষজ্ঞদের বার্তা—“তামা উপকারী, তবে পরিমাণেই আসল গুণ।” শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তামা গ্রহণ করলে উপকার নয়, বরং মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে গিয়ে যেন ভুলভাবে নিজের শরীরের ক্ষতি না করে ফেলেন, সেটিই সবচেয়ে জরুরি সতর্কতা।
