আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেরলে ফের মাথাচাড়া দিল রাজনৈতিক বিতর্ক। শনিবার এরনাকুলাম-বেঙ্গালুরু  বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে একদল স্কুলশিক্ষার্থী গেয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) “গান গীতম” বা সংগঠনের মূল সঙ্গীত। এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে রাজ্যে। কেরল সরকার ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  শনিবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিষেবা। উদ্বোধনের কিছুক্ষণের মধ্যেই সাউদার্ন রেলওয়ের সরকারি এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে দেখা যায়, এরনাকুলামের এলামাক্কারা এলাকার সরস্বতী বিদ্যানিকেতন পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা ট্রেনের ভিতরে RSS-এর “গান গীতম” গাইছে।

ভিডিওটি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনলাইনে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর সাউদার্ন রেলওয়ে ভিডিওটি সরিয়ে দেয়, পরে আবার ইংরেজি অনুবাদসহ পুনরায় শেয়ার করে।

স্কুলের বক্তব্য: বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডিন্টো কে.পি. সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেন, “ওটা দেশপ্রেমের গান ছিল, কোনও  রাজনৈতিক নির্দেশে গাওয়া হয়নি। বাচ্চারা নিজেরাই দেশাত্মবোধক গান হিসেবে এটি বেছে নিয়েছিল।” তিনি আরও জানান, ভিডিওটি সরিয়ে দেওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর  ও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছে।

অধ্যক্ষের অভিযোগ, “আমরা জানি না কেন শিক্ষা দপ্তর  তদন্তের নির্দেশ দিল। যদি সরকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, আমরা আইনি পথে যাওয়ার কথা ভাবব।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সঙ্ঘী বাচ্চা’ বলে অপমান করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া: কেরলের শিক্ষা মন্ত্রী ভি শিবঙ্কুট্টি রবিবার ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশনস (DPI)-কে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। এক সরকারি বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সরকার ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। সরকারি অনুষ্ঠানে শিশুদের ব্যবহার করে কোনও  গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক ভাবধারা প্রচার করা সংবিধানবিরোধী।”

মন্ত্রী আরও যোগ করেন, “দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয় মূল্যবোধ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব, এবং সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে।”

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এক্স-এ পোস্ট করে ঘটনার কঠোর নিন্দা করেন। তিনি লেখেন, “সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো একটি সংগঠনের গান সরকারি অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা সংবিধানের নীতির প্রকাশ্য লঙ্ঘন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই ভিডিও শেয়ার করা প্রমাণ করে, কীভাবে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্ঘ পরিবার রাজনীতির হাতে বিকৃত করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যে রেলওয়ে একসময় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের গর্বের প্রতীক ছিল, এখন সেটিই সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ প্রচারের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে। সকল ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এই বিপজ্জনক প্রবণতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী রবিবার থ্রিসুরে সাংবাদিকদের বলেন, “ওটা কেবল শিশুদের নিষ্পাপ উদযাপন ছিল। তারা মুহূর্তের আবেগে গানটি গেয়েছিল, এতে কোনও  চরমপন্থী ভাবনা নেই।”

সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ানও RSS গানের পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “‘গান গীতম’-এ কোথাও সাম্প্রদায়িক কিছু নেই। যারা দেশের বিরুদ্ধে ভাবনা ছড়ায়, তারাই এ ধরনের দেশাত্মবোধক গান পছন্দ করে না।”

কেরলের এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়েছে, শিক্ষা ও সরকারি অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাংগঠনিক মতাদর্শের প্রভাব নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত কতটা তীব্র হয়ে উঠছে। একপক্ষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যেখানে ঘটনাটিকে “নির্দোষ দেশপ্রেম” বলছেন, সেখানে রাজ্য সরকার সেটিকে সংবিধানবিরোধী সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। তদন্তের ফলাফল সামনে এলে বোঝা যাবে, এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোন পথে যায়। 

 

?ref_src=twsrc%5Etfw">November 8, 2025