বিশ্ববাজারে সোনার দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ম্লান হয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও যে সোনার ঝলক বিনিয়োগকারীদের মন কেড়েছিল, এখন সেই দাম কিছুটা কমেছে, যা এক ধরনের “গোল্ড কারেকশন” হিসেবে দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে কী কারণে এই পতন, এবং বিনিয়োগকারীদের এখন কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
2
9
প্রথমত, সোনার দামের এই সংশোধনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে মার্কিন ডলারের শক্তি ও বন্ড ইয়িল্ডের বৃদ্ধি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য বেশ মজবুত এসেছে—চাকরির বাজার স্থিতিশীল, ভোক্তা ব্যয় বাড়ছে, এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি রয়ে গেছে। এর ফলে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার শীঘ্রই কমাবে—এমন প্রত্যাশা দুর্বল হয়েছে। সুদের হার উচ্চ থাকলে বিনিয়োগকারীরা সোনা থেকে সরে গিয়ে ডলার বা বন্ডের দিকে ঝোঁকেন, কারণ সোনা থেকে কোনও সুদ বা আয় মেলে না।
3
9
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত বা ইউরোপের অস্থিরতা নিয়ে আগের যে আতঙ্ক ছিল, তা বর্তমানে কিছুটা কমে এসেছে। ফলে “সেফ হ্যাভেন” সম্পদ হিসেবে সোনার চাহিদা সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণবাজারে স্বাভাবিকভাবেই মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
4
9
তৃতীয় কারণটি হল চীনের চাহিদা ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নীতি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনা আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীনের ক্রয় প্রবণতা বাজারে বড় ভূমিকা রাখে। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মাসে নতুন করে সোনা কেনেনি, যা বাজারে হতাশার সঞ্চার করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সোনার দাম নিচের দিকে নেমে এসেছে।
5
9
তবে এর মানে এই নয় যে সোনার উজ্জ্বল দিন শেষ। বরং অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি একটি স্বাস্থ্যকর সংশোধন। দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধির পর এমন সামান্য পতন বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। বর্তমান দাম কমে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সুযোগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
6
9
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য আতঙ্কের কিছু নেই। সোনা ঐতিহাসিকভাবে মূল্য সংরক্ষণের অন্যতম নিরাপদ মাধ্যম, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে।
7
9
যাঁরা স্বল্পমেয়াদি ট্রেডার, তাঁদের উচিত সতর্ক থাকা এবং স্পষ্ট সাপোর্ট লেভেল পর্যবেক্ষণ করা। বাজারে ৫%–৭% কারেকশন স্বাভাবিক, কিন্তু তার বেশি হলে সেটি বিক্রির সিগন্যাল হতে পারে।
8
9
বৈচিত্র্য আনুন। আপনার পোর্টফোলিওতে সোনার পাশাপাশি কিছু অংশ রূপা, ইকুইটি বা বন্ডে রাখুন, যাতে ঝুঁকি কমে।
9
9
সবশেষে বলা যায়, সোনার ঝিলিক সাময়িকভাবে ম্লান হলেও, এটি নিভে যায়নি। ডলারের শক্তি কমলেই বা নতুন কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনা আবারও বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দে পরিণত হবে। তাই ধৈর্য রাখুন, বিশ্লেষণ করুন, এবং সময় বুঝে পদক্ষেপ নিন—এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।