আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম যেখানেই তাকান না কেন একটাই জিনিস চোখে পড়ছে হতো আপনার বিগত কয়েকদিন ধরে। লাল শাড়ি পরিহিতা নারীর ছবি। শুধু লাল নয় আরও অন্যান্য রংও আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিজেকে অন্য রূপে দেখার বাসনা প্রকট হয়ে উঠেছে এই ট্রেন্ডে। কোনও তরুণী নিজের একটি ছবি 0আপলোড করে নির্দিষ্ট কিছু প্রম্পট দিয়ে দিচ্ছেন। বিভিন্ন রঙয়ের শাড়ি পরে, বিভিন্ন আঙ্গিকে অন্যরকম ছবি তৈরি হয়ে যাচ্ছে তাঁর। ট্রেন্ডের নাম ‘ন্যানো বানানা’। শ্রষ্ঠা গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) জেমিনি।
গুগলের এই এআই-তে একটি বিশেষ ফোটো এডিটিং বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। বিশেষ প্রম্পট ব্যবহার করে পুরনো সিনেমার আদলে আসল ছবির মতো প্রতিকৃতি তৈরি করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই মহিলা। রূপান্তরিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে সকলেই লাল রঙের শাড়ি পরে প্রায়শই সিনেমাটিক বা ভিনটেজ ব্যাকড্রপে। কিন্তু যথারীতি এই ট্রেন্ড ভাইরাল হতেই গোপনীয়তা, তথ্যের সুরক্ষা এবং ছবি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: যৌনকাতর স্ত্রীর অতীত জানতেন না স্বামী, বন্ধুদের ব্যাচেলর পার্টি দিতে গিয়ে যা দেখলেন... পাল্টে গেল সব
জেমিনি ন্যানো বানান টুল কতটা নিরাপদ?
যদিও গুগল এবং ওপেনএআই (চ্যাটজিপিটি-র নির্মাতা) এর মতো প্রযুক্তি সংস্থাগুলি ব্যবহারকারীদের দ্বারা আপলোড করা তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য নানা পন্থা অবলম্বণ করে বলে দাবি করে। তবে এটি শেষ পর্যন্ত আমাদের হাতেই রয়েছে যে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কতটা সুরক্ষিত রাখতে পারব। ছবিগুলি যাদের হাতে যেতে পারে তাদের উদ্দেশ্য, তথ্যের অপব্যবহার, সম্মতি ছাড়াই পরিবর্তন বা মিথ্যাচারণ।
গুগলের ন্যানো ব্যানানা ছবিতে একটি অদৃশ্য ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক (SynthID), এবং মেটাডেটা ট্যাগ রয়েছে, যা কন্টেন্টকে এআই-জেনারেটেড হিসেবে শনাক্ত করার জন্য তৈরি। spielcreative.com অনুসারে, যদিও এআই-এর সাহায্যে তৈরি খুব বেশি বাস্তব দেখায় এবং ছবিগুলিকে ডিপফেকের মতো কাজে ব্যবহারের ঝুঁকি থাকেই। SynthID ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক (খালি চোখে দৃশ্যমান নয়) নিশ্চিত করতে পারে যে নির্দিষ্ট সনাক্তকরণ সরঞ্জাম দিয়ে বিশ্লেষণ করা হলে কন্টেন্ট তৈরি বা সম্পাদনা করার ক্ষেত্রে এআই ভূমিকা পালন করেছিল। এটি ব্যক্তি এবং প্ল্যাটফর্মগুলিকে ছবির উৎস যাচাই করতে সাহায্য করে। যদিও ওয়াটারমার্ক শনাক্তকরণ সরঞ্জামটি এখনও সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ নয়। ট্যাটলার এশিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াটারমার্ক থাকলেও, বেশিরভাগ লোকই তা যাচাই করতে পারবেন না।

এআই-ডিটেকশন স্টার্টআপ রিয়েলিটি ডিফেন্ডারের সিইও বেন কোলম্যান জানিয়েছেন, এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে ওয়াটারমার্কিং একটি মহৎ এবং প্রতিশ্রুতিশীল সমাধান বলে মনে হয়। কিন্তু এর বাস্তব-জগতের প্রয়োগগুলি শুরু থেকেই ব্যর্থ হয় যখন ছবিগুলি সহজেই নকল, অপসারণ করা যায়।
আপনার ছবি কীভাবে নিরাপদ রাখবেন
- আপনি কী আপলোড করবেন সে সম্পর্কে নির্বাচনী হোন: যে কোনও এআই টুলের মতোই আপনি যা ইনপুট দেবেন আউটপুটও তাই পাবেন। যতটা সম্ভব সংবেদনশীল ছবি (ব্যক্তিগত, অন্তরঙ্গ) আপলোড করা এড়িয়ে চলুন।
- মেটাডেটা সরিয়ে ফেলুন: আপলোড করার আগে লোকেশন ট্যাগ, ডিভাইসের তথ্যের মতো বিবরণ মুছে ফেলুন। এটি অনিচ্ছাকৃত তথ্য ফাঁস রোধে সাহায্য করতে পারে।
- প্রাইভেসি সেটিংস: অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে শক্তিশালী গোপনীয়তা সেটিংস ব্যবহার করা উচিৎ সবসময়। আপনার ছবি কে দেখতে পাবে তা নিয়ন্ত্রণ করলে কন্টেন্টের অপব্যবহার বা প্রতারকদের দ্বারা অ্যাক্সেস রোধ করা যেতে পারে। ব্যাপকভাবে শেয়ার করার আগে সতর্ক থাকুন কারণ। একবার সকলের সঙ্গে শেয়ার করা হলে ছবিগুলির অপব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
- তথ্য সংরক্ষণ করুন: আপনার আসল ছবিটি রেখে দিন অথবা প্রম্পট ব্যাকআপ রাখুন যাতে আপনি তথ্যের পরিবর্তন বা অপব্যবহার লক্ষ্য করে তা রিপোর্ট করতে পারেন।
- শর্তাবলী ভাল করে পড়ুন: ছবি আপলোড করলে প্ল্যাটফর্মটি আপনার ছবির ব্যবহারের অধিকার পাবে কি না, এআই মডেল প্রশিক্ষণে এটি ব্যবহার করা যাবে কি না তা বুঝে নিন ভাল করে।
