আজকাল ওয়েবডেস্ক: পর্যটনের ভরা মরশুম শুরু হয়ে গেলেও এখনও নবাব নগরী মুর্শিদাবাদে তেমনভাবে দেখা মিলছে না দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। শীতের নরম রোদের চাদর গায়ে মেখে হাতেগোনা মাত্র কিছু পর্যটক ঘুরতে আসছেন রাজ্যের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র লালবাগ শহরে। ঘুরে দেখছেন একদা বাংলা-বিহার-ওড়িশার নবাবদের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন সৌধগুলি। 

রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে মুর্শিদাবাদ জেলার হাজারদুয়ারি বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। এখানে একই চত্বরে পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারেন হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, নিজামত ইমামবাড়া, মদিনা মসজিদ, বাচ্চাওয়ালী কামান।  লালবাগ শহরে এলে মানুষ যে কেবল হাজারদুয়ারি দেখেন তা নয়, তার সঙ্গে এই শহরের আকর্ষণ নবাবদের স্মৃতি বিজড়িত মতিঝিল, কাটরা মসজিদ, খোশবাগে সিরাজদৌল্লা এবং নবাব পরিবারের সমাধি-সহ আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল। 

কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব প্রায় ২০৪ কিলোমিটার। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এক্সপ্রেস বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে নামলে সেখান থেকে ছোট গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে আপনি খুব সহজেই লালবাগ শহর ঘুরে বেড়াতে পারেন। এছাড়া বহরমপুর শহর থেকেও গাড়ি ভাড়া করে লালবাগ ঘুরতে যেতে পারেন। 
 
তবে ভরা পর্যটনের মরশুমে এবছর লালবাগ শহরের চিত্র খানিক আলাদা। শহরের বাসিন্দা শান্তনু রায় বলেন, "প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পড়লেই হাজারদুয়ারির সামনের রাস্তা দিয়ে আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে এমনকী পায়ে হেঁটে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে ওঠে। এই সময় ওই এলাকায় পর্যটকদের গাড়ির চাপ খুব বেশি থাকে।" তিনি জানান, "কিন্তু এই বছর ডিসেম্বর মাস পড়ে গেলেও  হাজারদুয়ারির সামনের রাস্তায় আমরা তেমন গাড়ি-ঘোড়ার ভিড় দেখতে পাচ্ছি না। স্থানীয় বাসিন্দারা  চার চাকার গাড়ি নিয়ে অনায়াসেই হাজারদুয়ারি এবং কেল্লা নিজামত চত্বর পার হয়ে যাচ্ছেন।"

এক সময় হাজারদুয়ারি ভ্রমণের মূল আকর্ষণই ছিল ঘোড়ায় টানা টাঙ্গায় চড়া।  টোটো-অটোর যুগে এখন সেই ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাও বিলুপ্তির পথে। এখন হাতেগোনা কয়েকটি টাঙ্গার দেখা মেলে হাজারদুয়ারির আশেপাশে।  পর্যটকের অভাবেও  এই টাঙাওয়ালাদের কন্ঠেও শোনা গেল হতাশার সুর। বিল্লাল খান নামে এক টাঙ্গা চালক জানান,"অল্প সময়ের মধ্যে টোটোতে করে  বেশিভাগ জায়গায় ঘুরে নিতে পারছেন পর্যটকরা। টোটো চালু হওয়ার পর এমনিতেই আমাদের ব্যবসা কমে গিয়েছে।  তার উপর ভরা পর্যটনের মরশুমে পর্যটকদের সংখ্যা কমতে থাকায় আমাদের অবস্থা আরও শোচনীয়।  এখন সারা দিনে এক একটি বা দু'টি সওয়ারী জোটে। কোনও দিন তাও জোটে না।"

লালগোলার তৃণমূল বিধায়ক তথা লালবাগ শহরের বাসিন্দা মহম্মদ আলি বলেন, "মুর্শিদাবাদ জেলায় পর্যটনের উপাদানের কোনও অভাব নেই। ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহরে যে সমস্ত উপাদান নেই, তার থেকে অনেক বেশি দেখার জিনিস মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও  মুর্শিদাবাদ জেলায় আশানুরূপ সংখ্যায় পর্যটক আসেন না।"
 
তিনি জানান,"মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর থেকে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের  মধ্যে উন্নত এবং দ্রুতগতির যানবাহন চলার মতো রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হলে সড়কপথে প্রচুর পর্যটক এই জেলায় এসে পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেখার ব্যাপারে উৎসাহী হবেন। ভাগীরথী নদীর অপর তীরে অবস্থিত খোশবাগ এবং আজিমগঞ্জ শহরে পৌঁছনোর জন্য এই দুটি এলাকায়  নদীর উপর ব্রিজ তৈরি করা সম্ভব হলে মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। নৌকায় গাড়ি নিয়ে নদী পার হতে অনেক পর্যটকই ইচ্ছুক নন বলে খোশবাগ এলাকায় অবস্থিত সিরাজউদ্দৌলা এবং তাঁর পরিবারের সমাধিক্ষেত্র এবং আজিমগঞ্জে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরগুলো  দেখতে এখনও আশানুরূপ সংখ্যায় পর্যটক যান না।"
 
জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি বলেন,  আগে শীতকাল আসলেই যেমন পর্যটকরা মুর্শিদাবাদে চলে আসতেন সেটা আর দেখা যাচ্ছে না। তার পিছনে কারণ হিসেবে তাঁরা দাবি করেছেন, দিঘায় জগন্নাথ মন্দির গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে একটা বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই দিঘার পথে যাত্রা করছেন। তাঁদের কথায়, মুর্শিদাবাদ হল ইতিহাসের একটা দলিল। তাঁদের আশঙ্কা, হয়ত নতুন প্রজন্ম নবাবী আমলের সেই ইতিহাস নিয়ে অতটা আগ্রহী নয়!