আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিচয় রক্ষা করার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নে তাদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারত প্রতি বছর ১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় সংখ্যালঘু অধিকার দিবস পালন করে। এই দিনটি ভারতীয় সমাজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অবদানকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কারণ সংবিধান তাদের ভাষাগত, জাতিগত বা ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান অধিকারের ওপর জোর দেয়। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য, রাষ্ট্রপুঞ্জ ধর্মীয়, ভাষাগত বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কিত বিবৃতি জারির পর, ভারত সরকার ১৯৯২ সালে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠা করে।

প্রতিটি ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুর জানা উচিত এমন আইনগুল হল-

মৌলিক সাম্য এবং বৈষম্যহীনতার অধিকার

ধারা ১৪– আইনের দৃষ্টিতে সাম্য: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়-সহ সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।

ধারা ১৫(১)-(২)– কোনও বৈষম্য নয়: রাষ্ট্র কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য করতে পারবে না। এই ধারায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলিতেও বৈষম্য নিষিদ্ধ।

ধারা ১৬(১)-(২) – সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ: সরাকরি চাকরিতে সুযোগের সাম্য নিশ্চিত করা এবং কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বংশ, জন্মস্থান বা বসবাসের স্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ।

ধর্মীয় স্বাধীনতা

ধারা ২৫বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তি ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচারে স্বাধীন।

ধারা ২৬ধর্মীয় বিষয় পরিচালনা: প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করতে, সম্পত্তি মালিকানা লাভ করতে এবং ধর্মীয় বিষয়ে নিজেদের কাজ পরিচালনা করতে পারবে।

ধারা ২৭: ভারতের সংবিধান কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে প্রচার বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে কর আরোপ করা থেকে রাষ্ট্রকে নিষিদ্ধ করে, যা ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে এবং সরকারি তহবিলকে অন্য ধর্মের চেয়ে কোনও একটি ধর্মকে সমর্থন করা থেকে বিরত রাখে। যদিও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ ব্যয় বা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা ফি অনুমোদিত। এই মৌলিক অধিকারটি আর্থিক নিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে, যা নাগরিকদের অন্যদের ধর্মে অর্থ সাহায্য করতে বাধ্য না করে, নিজেদের ধর্ম পালন করার সুযোগ দেয়।

ধারা ২৮– এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা এবং উপাসনার বিষয়ে স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। সরকারিভাবে পরিচালিত বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করে এবং সরকার-স্বীকৃত বা সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ থেকে সুরক্ষা দেয়। এমনকি নির্দিষ্ট শর্তে ট্রাস্ট-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার অনুমতিও দেয়। 

সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত অধিকার

ধারা ২৯(১)– ভাষা, লিপি, সংস্কৃতি সংরক্ষণ: স্বতন্ত্র ভাষা, লিপি বা সংস্কৃতিসম্পন্ন নাগরিকদের যে কোনও অংশের তা সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে— এটি স্পষ্টভাবে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করে।

ধারা ২৯(২) – ভর্তিতে অস্বীকার নয়: কোনও নাগরিককে কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষা বা এর যে কোনও একটির ভিত্তিতে রাষ্ট্রচালিত বা সরকারের সহায়তাপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা ৩০(১)– সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সকল ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, পেশাগত প্রতিষ্ঠান) স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার রয়েছে।

ধারা ৩০(২)– রাষ্ট্রীয় সহায়তায় সাম্য: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কেবল ধর্মীয় বা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে সরকার তাদের অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য করতে পারবে না।

সম্পত্তির সুরক্ষা: যদি রাষ্ট্র কোনও সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে, তবে ক্ষতিপূরণ এমনভাবে নির্ধারণ করা যাবে না যা কার্যকরভাবে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকারকে নষ্ট করে দেয়।

রাজনৈতিক ও কল্যাণমুখী আইন

ধারা ৪৬ (রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতি): রাষ্ট্রকে দুর্বলতর অংশের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রসারে এবং তাদের সামাজিক অবিচার ও শোষণ থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দেয়। এটি প্রায়শই সংখ্যালঘুদের জন্য তৈরি প্রকল্পগুলিকে ন্যায্যতা দিতে ব্যবহৃত হয়।

ধারা ৩৩০–৩৩৪ (ঐতিহাসিকভাবে প্রতিনিধিত্ব): পূর্বে বিশেষ প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রদান করত (যেমন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মনোনয়ন), যা আইনসভায় সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বরের প্রতি সাংবিধানিক উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটায়, যদিও কিছু ধারা পরবর্তীতে বিলুপ্ত বা সংশোধিত হয়েছে।

ভাষা সংক্রান্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা

ধারা ৩৪৭– সংখ্যালঘু ভাষার স্বীকৃতি: যদি কোনও রাজ্যের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের ভাষার স্বীকৃতি চায়, তবে রাষ্ট্রপতি সেই রাজ্যের মধ্যে সরকারি কাজের জন্য এই ধরনের স্বীকৃতির নির্দেশ দিতে পারেন।

ধারা ৩৫০এ– মাতৃভাষায় শিক্ষা: রাষ্ট্রকে অবশ্যই শিশুদের, বিশেষ করে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করতে হবে।

ধারা ৩৫০বি – ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ আধিকারিক: একজন সাংবিধানিক আধিকারিক অভিযোগ তদন্ত করেন, রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট জমা দেন এবং রাজ্যগুলি সংখ্যালঘুদের ভাষার অধিকার রক্ষা করছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করেন।