কিছু দিন আগেও সম্পর্ক ভাঙা মানে ছিল একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হওয়া, ফোনে কথা না বলা বা পরিচিতদের মাধ্যমে দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু আজকের ডিজিটাল যুগে ব্রেকআপ যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। সমাজ মাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ আর বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মানুষের জীবনের সঙ্গে এতটাই মিশে গেছে যে সম্পর্ক ভাঙার পরও সেই ছায়া এড়িয়ে চলা যায় না। আসলে প্রযুক্তি যেমন আমাদের কাছাকাছি এনেছে, তেমনি বিচ্ছেদের কষ্টও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিজিটাল সংযোগ মুছে ফেলা সহজ নয়, আর সেখানেই লুকিয়ে আছে আধুনিক যুগের সম্পর্ক ভাঙার সবচেয়ে কঠিন দিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির কারণে এখন বিচ্ছেদ মানসিকভাবে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। নেপথ্যে ঠিক কী কারণ রয়েছে, দেখে নেওয়া যাক-


১. নিয়মিত তুলনা করার অভ্যাসঃ ব্রেকআপের পরও এখন প্রাক্তনের জীবনের খুঁটিনাটি সহজেই দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে তারা যতটা না বাস্তব, তার থেকেও বেশি ‘খুশি’র বা “সাফল্য”-এর ছবি তুলে ধরে। এতে প্রাক্তনের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা শুরু হয়। মনে হতে থাকে, হয়তো তাঁদের জীবন আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়ে গেছে। এই ধরণের তুলনা আত্মবিশ্বাস কমায়, হীনমন্যতা ও একাকীত্ব বাড়ায়।

আরও পড়ুনঃ কনকনে ঠান্ডা জলে হাত দিলে নিমেষে দূর হবে মাথাব্যথা! বরফের কামালেই ফিরবে মনের শান্তি, ফুরফুরে থাকবে মেজাজ

২. মিথ্যা সংযোগের ভ্রমঃ ডিজিটাল দুনিয়ায় মাঝে মাঝে প্রাক্তনের একটি ‘লাইক’, স্টোরি দেখা বা হঠাৎ মেসেজ ভুল ধারণা দেয় যে সম্পর্ক এখনও কিছুটা টিকে আছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলো স্থায়ী নয়, বরং বিভ্রান্তিকর। এতে ভুল প্রত্যাশা তৈরি হয়, আর হতাশা আরও গভীর হয়।

৩. একসঙ্গে ভাগ করা ডিজিটাল জগতের ভাঙনঃ আজকের দিনে অনেক সম্পর্কই ডিজিটাল অভ্যাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। একই মিউজিক প্লেলিস্ট, কোনও শো দেখা, গেম খেলা বা একে অপরকে মজার ভিডিও পাঠানো। ব্রেক-আপ হলে এই সমস্ত যৌথ ডিজিটাল অভ্যাস হঠাৎ করেই ভেঙে যায়। তখন মনে হয় জীবনের একটা বড় জায়গা হঠাৎ শূন্য হয়ে গেছে।

৪. অবিরাম ডিজিটাল স্মৃতিঃ ফোনের ছবি, পুরনো ট্যাগ, শেয়ার করা পোস্ট বা গানের তালিকা—সবকিছুই একেকটা স্মৃতি হয়ে যায়। এমনকী অ্যালগরিদমও মাঝেমধ্যেই পুরনো ছবি বা পোস্ট মনে করিয়ে দেয়। এই অবিরাম স্মৃতি থেকে পালানো যায় না, ফলে নতুন করে জীবন গড়ার পথ আরও কঠিন হয়ে ওঠে।

৫. হঠাৎ ‘ঘোস্টিং’ঃ আগে হয়তো সম্পর্ক শেষ হলেও মানুষ সামনাসামনি বা অন্তত কথার মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে হঠাৎ করে ব্লক, আনফ্রেন্ড বা মিউট করে দেওয়া খুব সাধারণ বিষয়। এতে একদিকে সীমারেখা তৈরি হলেও, অন্যদিকে কেন এমন হল—তার উত্তর না পেয়ে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এই আচরণকে বিশেষজ্ঞরা “ঘোস্টিং” বলছেন, যা সম্পর্ক ভাঙার কষ্টকে আরও জটিল করে তোলে।