আজকাল ওয়েবডেস্ক: কম্পিউটার সারাদিন চললে যেমন রিস্টার্ট করতে হয়, তেমনই আমাদের শরীরকেও রিস্টার্ট করতে হয় প্রতিদিন, ঘুমের মধ্যে দিয়ে। দিনের শেষে ঘুম যেন হয় প্রশান্তির, বিশ্রামের। কিন্তু স্ট্রেস, উদ্বেগ, আর কর্মব্যস্ত জীবনের চাপে অনেকেই আজ নিদ্রাহীন রাত্রির শিকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম প্রধান কারণ ‘কর্টিসল’। এই ‘স্ট্রেস হরমোন’টি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়লেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু খাদ্যতালিকায় কিছু স্মার্ট পরিবর্তন করলেই কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
রাতে কী খাবেন, কী খাবেন না সেটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, নির্দিষ্ট কিছু খাবার আছে যা রাতে ডিনারের প্লেটে রাখলে কর্টিসল কমে যায়, আর তার ফলে ঘুম হয় আরও গভীর, আরও স্বস্তিদায়ক।
আরও পড়ুন: লাবুবু ঘিরে বাড়ছে আতঙ্ক! পুতুল, নাকি শয়তানের দূত? ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় সন্ত্রস্ত বলি নায়িকাও
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
১. ওটস
এখন বহু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সকালের জলখাবার হিসাবে ওটস খান। কিন্তু ওটস শুধু সকালের ব্রেকফাস্টের জন্যই নয়, রাতেও এটি হতে পারে আদর্শ খাবার। ওটসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে। সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়লে কর্টিসলের প্রভাব কমে, এবং শরীর ধীরে ধীরে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। এক বাটি ঈষদুষ্ণ ওটসে বাদাম, মৌরি গুঁড়ো বা সামান্য দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে ঘুমের আগে মন ও শরীর দুই-ই শান্ত হয়।
২. টক দই
টক দই বা গ্রিক ইয়োগার্টের মধ্যে থাকে প্রচুর প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, যা পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও মানসিক চাপের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রোবায়োটিক উপাদান কর্টিসল হ্রাসে সাহায্য করে, ফলে ঘুম হয় শান্তিময়। রাতের খাবার খাওয়ার পর একটি বাটি টক দই খেতে পারেন। চাইলে তার সঙ্গে সামান্য মধু বা চিয়া সিডসও মেশানো যায়।
৩. বাদাম ও বীজ
আমন্ড, আখরোট, সূর্যমুখী বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিডের মতো বাদাম ও বীজে থাকে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম। এই মৌলটি কর্টিসলের মাত্রা কমাতে কার্যকর। ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ুর উত্তেজনা কমিয়ে দেয়, এবং স্নায়ুকে শান্ত করতে সাহায্য করে। ডিনারে স্যালাড বা খিচুড়ির উপর কিছু বাদাম ছড়িয়ে দিলে যেমন স্বাদ বাড়ে, তেমনই বাড়ে স্বাস্থ্যগুণও।
৪. কলাইয়ের ডাল বা মুগ ডাল
কলাইয়ের ডাল বা মুগ ডালের মধ্যে থাকে ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ডাল প্রোটিনে ভরপুর হওয়ায় রাত্রিকালীন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিন ব্যালান্স হয়, ফলে কর্টিসলের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে। রাতে খাবার খাওয়ার সময় এক বাটি হালকা ঘন ডাল খাওয়া কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ উপায়।
৫. ক্যামোমাইল চা
কী ভাবছেন? চা খেলে উল্টে ঘুম চলে যাবে? ডিনারের পরে এই বিশেষ ক্যামোমাইল চা শরীরকে হালকা করে দেয়। এই চায়ে থাকে অ্যাপিজেনিন নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা কর্টিসলের উৎপাদন কমায় ও স্নায়ুকে শিথিল করে। ডিনারের আধ ঘণ্টা পর এক কাপ গরম ক্যামোমাইল চা পান করতে পারেন। বিশেষ করে যাঁরা চায়ে দুধ বা চিনি খান না, তাঁদের জন্য এটি আদর্শ রিল্যাক্সেশন ড্রিঙ্ক।
ঘুম ভাল করার ওষুধ না খেয়েও খাদ্যতালিকায় ছোট পরিবর্তন এনে কর্টিসলের বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব। তবে রাতের খাবার কখন খাওয়া হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা বলেন, ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলাই উত্তম। পাশাপাশি, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় রাতের ডিনার থেকে বাদ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়, ঘুম সুস্থ থাকার অন্যতম চাবিকাঠি।
