বর্ষা ব্যাপারটা এমনিতে বেশ রোমান্টিক। জানলার বাইরে অবিরাম বর্ষণ। কখনও টিপটিপ, কখনও ঝিরঝির, কখনও ঝমঝম। এমন দিনগুলোয় বারান্দায় এক কাপ কফি নিয়ে বসতে কিংবা চা-পকোড়া সহযোগে আড্ডা জমাতে কার না ভাল লাগে! কিন্তু যদি জল-কাদায় বেরোতে হয় নিয়মিত? তখন কি ততটাও ভাল লাগে? আর প্যাচপেচে গরমের সঙ্গে নাছোড় বৃষ্টিতে বেরোনোর চক্করে ভিজে গিয়ে কিংবা সিন্থেটিক জামাকাপড়ের কল্যাণে যদি ত্বকের সমস্যাও ঘ্যানঘেনে হয়ে দাঁড়ায়, তবে তো কথাই নেই!
কলকাতায় সবে ঘনিয়েছে বৃষ্টির মরশুম। এই বেলা তবে জেনে নিন বর্ষার দিনে সাধারণভাবে কী কী সমস্যায় ভুগতে পারে আপনার ত্বক। আর কী করেই বা তার থেকে রেহাই মিলতে পারে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন - এ মরসুমে বৃষ্টি লেগেই থাকে। গরমও যে কমে, এমনটা কিন্তু নয়। বাড়তি আর্দ্রতার কারণে ঘামও হয় বেশি। সব মিলিয়ে প্যাচপেচে আবহাওয়ায় ত্বকে আক্রমণ শানায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন। শরীরের ভাঁজে, যেমন বগল, কুঁচকি, স্তনের নীচের অংশ বা পায়ের আঙুলের খাঁজে দেখা দিতে পারে ছত্রাকের সংক্রমণ। তার জেরে চুলকানি বা ঘা হতে পারে। বৃষ্টির দিনে ভেজা জামাকাপড় সহজে শুকোনোর ভাবনায় সিন্থেটিক পোশাক পরার দিকেই ঝোঁকেন মানুষ। তাতে সমস্যা বাড়ে। ফলে এ সময়টায় ঢোলা সুতির পোশাক পরলে, শরীরের ভাঁজের অংশগুলোকে যথাসম্ভব শুকনো রাখতে পারলে এ সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে অনেকটাই।
ঘাম থেকে র্যাশ – গরমে, অত্যধিক আর্দ্রতায়, সিন্থেটিক জামাকাপড়ের কারণে বর্ষার দিনগুলোয় বড্ড ঘাম হয়। সেই ঘাম বসে গায়ের নানা জায়গায় লালচে র্যাশ বেরোতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিতরে ভিতরে জ্বর হয়ে থাকলেও অনেক সময়ে এই ধরনের র্যাশ দেখা দেয়। ঠান্ডা পরিবেশে, খোলামেলা ঘরে তা আবার আস্তে আস্তে উপশম হয়। এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন এবং যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে, এসিতে, ঠিকমতো হাওয়া চলাচলের উপযোগী খোলামেলা ঘরে সময় কাটান।
বগলের দুর্গন্ধ – বাড়তি ঘাম এই মরসুমের একটা সমস্যা। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা ঘাম নানা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত বগলে জমে থাকা ঘাম দুর্গন্ধ তৈরি করে। যা আপনার নিজের তো বটেই, আশপাশে থাকা মানুষেরও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারেন। এই সমস্যা মেটাতে অনেকেই ডিওডোরান্টকে হাতিয়ার করেন। তবে কারও কারও ডিওডোরান্ট থেকে অ্যালার্জি এবং তার জেরে চুলকানির সমস্যাও তৈরি হয়ে যায়। শরীরে ঘাম জমে যাওয়া আটকাতে তাই বরং আস্থা রাখুন ঢিলেঢালা সুতির পোশাকে।
ব্রণ – আর্দ্রতা বেশি এবং মুখের ত্বকে ঘাম বসার কারণে বর্ষার দিনগুলোয় বড্ড ভোগায় ব্রণ। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁদের সমস্যা তো আরওই বেশি। এর থেকে রেহাই পেতে ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। সমস্যা বাড়লে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এগজিমা – অত্যধিক আর্দ্রতা এবং ঘাম ত্বকে এগজিমার মতো সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ত্বকে দেখা দেয় লাল র্যাশ এবং চুলকানি। বিশেষত যাঁরা এ সমস্যায় আগে ভুগেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝামেলা আরও বেশি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা জরুরি। তাই ত্বক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে ভুলবেন না।
বৃষ্টিভেজা দিনগুলোয় ত্বককে ভাল রাখতে তাই কিছু পরিচর্যার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন,
• ত্বক সবসময়ে পরিষ্কার রাখুন। ত্বকের বাড়তি তেল, ঘাম, ধুলোময়লা সাফ করতে দু’বেলা ক্লেনজার ব্যবহার উপযোগী। ঘন ঘন মুখে হাত দেবেন না। এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে।
• নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করুন। মরা কোষের পরত সরে ত্বক ঝলমলে দেখাবে।
• ত্বকের নির্দিষ্ট আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। এই সময়টায় বেছে নিন হাল্কা ময়শ্চারাইজার, যা তেলতেলে ভাব ছাড়াই ত্বককে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগাবে। এ ছাড়াও ঘামঝরা শরীরে আর্দ্রতা যথাযথ রাখতে ঠিক মতো জল, জলীয় ফল খান।
• ত্বককে যথাসম্ভব শুকনো রাখুন। হাল্কা, আরামদায়ক পোশাক পরার পাশাপাশি ছাতা-রেনকোট ব্যবহার, এবং ত্বককে ঘাম থেকে রেহাই দিতে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
• চড়া এবং ভারী মেকআপ এড়িয়ে যান যতটা পারেন। রোদ না থাকলেও এ সময়টায় ইউভি রে কিন্তু সক্রিয় থাকে। তাই বাইরে বেরোলে অবশ্যই ব্যবহার করুন সানস্ক্রিন। এ মরসুমে ত্বকের যত্নে বা ছোটখাট সমস্যায় ঘরোয়া উপকরণই ভাল।
• রোজকার খাওয়াদাওয়া এবং ত্বক পরিচর্যার উপকরণে রাখুন অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন। তা আপনার ত্বককে করে তুলবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ঠিকমতো যত্ন নিলে মেঘ-বৃষ্টিতে আঁধার হয়ে থাকা দিনগুলোতেও ঝলমলে থাকবে আপনার ত্বক। আপনিও থাকবেন নিশ্চিন্ত।
