আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের গুইঝো প্রদেশে রয়েছে আশ্চর্য এক পাহাড়ি জনপদ, অজানা সেই গ্রামটির নাম গাওয়াং। আর এই গ্রামেই রয়েছে অদ্ভুত এক পাহাড়। বহু প্রজন্ম ধরে এই গ্রামের মানুষ পাহাড়টির এক অদ্ভুত আচরণের সাক্ষী। স্থানীয়দের ভাষায় পাহাড়টির নাম—চুয়াংগুয়া শান, বাংলায় এর তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘ডিম পাড়া পাহাড়’। শুনতে অবাক লাগেও, ঘটনাটা কিন্তু মোটেই মিথ্যে নয়।
প্রায় তিন দশক অন্তর, পাহারটির নির্দিষ্ট এক ঢালু অংশ থেকে খসে পড়ে ডিমের মতো দেখতে প্রস্তরখণ্ড। কিছু পাথর গড়িয়ে যায় নিচের দিকে, কিছু আবার ঠাঁই পায় স্থানীয়দের উঠোনে। পাথরগুলির ওজন গড়ে ৬০০ গ্রামের কাছাকাছি, তবে কিছু কিছু পাথর এক-দেড় কেজিও হয়। আশ্চর্যের বিষয়, পাথরগুলি দেখতে হাঁস-মুরগির ডিমের মতো—মসৃণ, গোলগাল এবং কিছুটা লম্বাটে।
কিন্তু ঠিক কেন এমন হয়? পাহাড় কি সত্যিই ডিম পাড়ে? ভূতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, এটি এক বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। বহু লক্ষ বছর আগে এলাকাটি ছিল সমুদ্রের তলদেশে। সেই সময় জলের নীচে জমা পড়ে নানা খনিজ, ক্যালসিয়াম ও জৈব পদার্থ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি জমাট বাঁধতে থাকে। এদের গঠন শক্ত হলেও, বাইরের চারপাশে যে স্তর থাকে, তা তুলনামূলক ভাবে ক্ষয়প্রবণ। ফলে বৃষ্টি ও বায়ুর প্রভাবে বাইরের আবরণ ক্ষয়ে গেলে, ভিতরের এই কঠিন অংশ বেরিয়ে আসে এবং ধীরে ধীরে খসে পড়ে ঢালের গা বেয়ে। এই গঠনকে বলে ‘গোলাকার গাঁঠ’ বলা হয়।
এই বিস্ময়কর পাথর দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন বহু পর্যটক। স্থানীয় প্রশাসনও এই অদ্ভুত ঘটনাকে ঘিরে পর্যটন উন্নয়নে উদ্যোগী। সবমিলিয়ে 'ডিম পাড়া পাহাড়' যেন প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া এক জীবন্ত শিল্পকর্ম।
