আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিবসেনা (উদ্ধব বলয়) নেতা ও বিধান পরিষদের সদস্য অনিল পরাব রবিবার দাবি করেন, মুম্বইয়ের বান্দ্রায় অবস্থিত উদ্ধব ঠাকরের বাসভবন ‘মাতোশ্রী’র উপরে একটি ড্রোনকে উড়তে দেখা গেছে। তিনি ঘটনাটিকে “অত্যন্ত গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন” বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে পুলিশের তরফে তদন্ত দাবি করেছেন।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে পরাব লেখেন, প্রশাসনকে অবিলম্বে ড্রোন অপারেটরকে শনাক্ত করতে হবে, কেন এই ড্রোন উড়ছিল তা জানতে হবে এবং এর সঙ্গে কোনও সন্ত্রাসবাদী যোগ রয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, “মাতোশ্রী মুম্বইয়ের অন্যতম উচ্চ নিরাপত্তা জোন। সেখানে অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানো বা ছবি তোলা গুরুতর অপরাধ, একে হালকাভাবে নেওয়া যায় না।”
পরাবের বক্তব্য অনুযায়ী, ড্রোনটি কেন উড়ছিল এবং কার নির্দেশে তা পরিচালিত হচ্ছিল, তা জানা জরুরি। তিনি দাবি করেন, “এই ঘটনায় দলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবলমাত্র একটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব।”
তবে মুম্বই পুলিশ দ্রুতই এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়। পুলিশ উপকমিশনার (জোন ৮) মানীশ কলওানিয়া জানান, “ড্রোনটি আসলে বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স এলাকায় মুম্বই মহানগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এমএমআরডিএ) অনুমোদিত সমীক্ষার অংশ ছিল। কোনও নিরাপত্তা লঙ্ঘন হয়নি। অনুগ্রহ করে ভুল তথ্য ছড়াবেন না।”
এই বক্তব্যের জবাবে উদ্ধব ঠাকরে প্রশ্ন তোলেন, “কোন সমীক্ষায় এমন অনুমতি দেওয়া হয় যে, কেউ বাড়ির ভিতরে উঁকি দিতে পারে এবং ধরা পড়লে দ্রুত উড়ে পালিয়ে যায়?” তিনি আরও বলেন, “যদি সত্যিই সমীক্ষা হয়, তাহলে বাসিন্দাদের আগে থেকে জানানো হয়নি কেন?”
উদ্ধবের আরও অভিযোগ, “এমএমআরডিএ কি শুধু আমাদের বাড়ির ওপরেই এই ‘সমীক্ষা’ করছে, পুরো বি.কে.সি-র নয়?” তিনি সংস্থাটির কার্যপদ্ধতি নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, “এমএমআরডিএ বরং মাঠে নেমে তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলির দিকে নজর দিক — যেমন এমটিএইচএল (অটল সেতু), যা তাদের কাজের ব্যর্থতার জীবন্ত উদাহরণ।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি পুলিশের অনুমতি থাকে, তবে এলাকার বাসিন্দাদের জানানো হয়নি কেন?” উদ্ধবের মতে, বিষয়টি কেবল অনুমতির নয়, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে।
এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়েছে। সম্প্রতি উদ্ধব ঠাকরে মরাঠওয়াড়া অঞ্চলের বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি সরকারকে “অপর্যাপ্ত ত্রাণ প্যাকেজ”-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি দাবি করেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ৫০,০০০ টাকার ক্ষতিপূরণ এবং সম্পূর্ণ কৃষিঋণ মকুব করতে হবে।
উল্লেখযোগ্য, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর উদ্ধব ঠাকরে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস ও শরদ পওয়ারের এনসিপি (এসপি)-র সঙ্গে মিলে ‘মহা বিকাশ আঘাড়ি’ সরকার গঠন করেন। তবে ২০২২ সালে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনার ভাঙনের ফলে সেই সরকার ভেঙে পড়ে এবং বর্তমান মহায়ুতি সরকার গঠিত হয়।
‘মাতোশ্রী’ ড্রোন বিতর্ককে ঘিরে এখন উদ্ধবের দল দাবি করছে, এটি শুধু একটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রশ্ন নয়, বরং প্রশাসনিক পক্ষপাত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশ ও এমএমআরডিএ–র তরফে যদিও ঘটনাকে ‘সাধারণ জরিপ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তবু উদ্ধব বলয় সতর্ক করছে, “এই তথাকথিত সমীক্ষা যেন নজরদারি বা ভয় দেখানোর অজুহাত না হয়ে ওঠে।”
