আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর প্যারাপ্পানা আগ্রাহারা সেন্ট্রাল জেল ঘিরে ফের উঠেছে বড় ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটির অভিযোগ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কুখ্যাত কয়েদিরা জেলের ভেতরে বসেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, এমনকি টেলিভিশনও দেখছেন।

এই ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে—সোনার চোরাচালান মামলায় অভিযুক্ত তেলেগু অভিনেতা তরুণ, আইসিস নিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত জুহাদ হামিদ শেখিল মান্না, এবং দণ্ডপ্রাপ্ত সিরিয়াল ধর্ষক ও খুনি উমেশ রেড্ডি—সবাইকে জেলের ভেতরে অবাধে মোবাইল ব্যবহার করতে। উমেশ রেড্ডিকে আবার তার সেলে বসে টেলিভিশন দেখতে দেখা গেছে। যদিও ভিডিওগুলোর তারিখ নির্দিষ্ট নয়, তবে তা প্রকাশ্যে আসার পরেই শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা।

বিতর্ক ঘিরে মুখ খুলেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর এবং বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “কারা দপ্তরের  ডিজি ছুটিতে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আগামীকাল উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন। যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না। ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা হবে।”

অন্যদিকে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জি. পরমেশ্বরও কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। যদি এইভাবে চলতে থাকে, তাহলে একে আর জেল বলা যাবে না। আমি ইতিমধ্যেই বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছি। যদি সেই রিপোর্ট সন্তোষজনক না হয়, তাহলে আমি নতুন কমিটি গঠন করব। প্রয়োজনে পৃথক তদন্তও চালানো হবে।”

মন্ত্রী আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদী হোক বা অন্য কেউ, কারও হাতেই মোবাইল ফোন থাকা উচিত নয়। অতীতে এমন ঘটনার পর আমরা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছিলাম, এবারও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, জেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং কারা কর্মকর্তাদের জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এটি প্রথমবার নয় যে প্যারাপ্পানা আগ্রাহারা সেন্ট্রাল জেল বিতর্কে জড়াল। এর আগেও এই উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগারে বন্দিদের বিলাসিতা ও নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। গত অক্টোবর মাসে কুখ্যাত রাউডি-শীটার শ্রীনিবাস ওরফে ‘গুব্বাচি সীনা’র জন্মদিন উদযাপনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত ওই বন্দি জেলের ভেতরেই কেক কাটছেন, আপেল দিয়ে তৈরি মালা পরছেন এবং সহবন্দিদের সঙ্গে আনন্দ করছেন।

এরও আগে, অভিনেতা দর্শন থুগুদীপের জেলে ‘ভিআইপি ট্রিটমেন্ট’ নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা গিয়েছিল, দর্শন জেলের ভেতরে আরাম করে চেয়ারে বসে আছেন, হাতে সিগারেট ও কফির মগ, আর পাশে বসে আছেন অপর কয়েদিরা।

এই ধারাবাহিক ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে প্রশ্ন উঠছে—বেঙ্গালুরুর সর্বাধিক নিরাপত্তা-বেষ্টিত কারাগারেও যদি এই ধরনের অব্যবস্থা চলতে থাকে, তবে সাধারণ কারাগারগুলোর অবস্থা কী? প্রশাসনের কড়া বক্তব্য সত্ত্বেও, কারাগার ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ঘুষচক্রের ইঙ্গিত অনেকটাই স্পষ্ট।

সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে এখন জোর গুঞ্জন—প্যারাপ্পানা আগ্রাহারা কি আদৌ কারাগার, নাকি প্রভাবশালীদের জন্য আরামদায়ক আশ্রয়কেন্দ্র? মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কঠোর আশ্বাসে জনমনে কিছুটা আস্থা ফিরলেও, বাস্তবিক পরিবর্তন কতটা ঘটবে, তা সময়ই বলবে।