আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমাজে মানসিক রোগ আর পাঁচটা রোগের মতোই, যার প্রকৃত চিকিৎসার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত। কিন্তু মানসিক রোগ মানে কি আর পাঁচটি রোগের মতোই যা চিকিৎসকের পরামর্শে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। আর সেই সচেতনতার উদ্দেশ্য নিয়েই বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হল ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক সাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সমাজের প্রখ্যাত চিকিৎসকরা এবং একই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিদ্যজনেরা। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন, অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য, রিমা ভট্টাচার্য, আইএমএ প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক সুভাষ চক্রবর্তী ও সাংবাদিক-সহ একাধিক ব্যক্তিত্বরা।
১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, সচেতনতার দিবস। এই দিনটি ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর প্রথমবার পালন করা হয়েছিল। কিছু দেশে এই দিনটিকে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসাবে পালন করা হয়। কোনও রকম মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। মানুষের সুস্থ জীবনযাপন এবং কর্মক্ষেত্রে ঠিকমতো কর্ম সম্পাদন উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যের মাধ্যমে সম্ভব। তাই প্রতিটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক মতো বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে মানবসমাজে যাতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি না হয় তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার এবং সচেতন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে পালিত হয় বিশ্বজুড়ে। ২০২৫ সালের থিম ছিল, ‘মানবিক সংকটে মানসিক স্বাস্থ্য’। যা সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে সহজলভ্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

অনুষ্ঠানের উপস্থিত প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা যদি বর্তমান অসামাজিক পরিস্থিতি দেখি তাহলে সমাজের কেউই সেই অর্থে সুস্থ নয়, প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছেই। সবচেয়ে বড় বিষয় আমাদের প্রত্যেকের যেমন একটা মন রয়েছে আর সেটা যেমন মাঝেমধ্যে আমাদের খারাপ হয়, ঠিক একই রকম ভাবে সেই খারাপ হওয়ার কারণে একটা চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তাকে পাগল বলে কোনও অবস্থাতেই ছোট করা উচিত নয়। মানুষের শরীর যেমন অসুস্থ হয় ঠিক সেরকমই মানুষের মন আছে তারও অসুস্থতার জন্যই সঠিক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন মতো যাওয়াটা জরুরি। কোনও অবস্থাতেই তা অবহেলা করা উচিত নয়। ছোট ছোট বিষয় মন খারাপ হলে বা মনের সমস্যা হলে তা আমরা নিজেরাই বিভিন্ন স্কিলের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু তা বড় মাত্রায় অসুস্থতা হলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়াটা খুবই জরুরি। অভিভাবকদের বেশি করে তাদের সন্তানদের মনের গভীরতা বোঝা উচিত এবং জোর করে কোনও কিছু চাপিয়ে না দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেদের সচেতন হওয়াটা অধিকমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ। তবেই মানসিক অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব একজন মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে।”

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রখ্যাত চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “বেশ কিছু মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা রয়েছে মনের রোগ মানেই পাগল হয়ে যাওয়া এবং তার চিকিৎসা করা যা সম্পূর্ণ ভুল। মানুষের যেমন মন আছে. তেমনি তার মন খারাপ হওয়াও থাকে। মনের স্বাস্থ্য নিরাময় করাই আমাদের কাজ। আর এই মনের রোগের কারণে সমাজে বেশকিছু মানুষ এই রোগীদেরকে সমাজে অবহেলা করেন এবং পাগল বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদেরকে এ ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে যেতে লজ্জা বোধ করেন। পিছে পাগল বলে হেনস্থা হতে হয় বা লোকে জেনে যাবে। তাদের জন্য বলব এই ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে আগে বেরিয়ে আসতে হবে এবং মনের রোগের কারণে চিকিৎসকরা ওষুধ দিলে তাকে ঠিকমতো সেবন করতে হবে। মানসিক চিকিৎসার ওষুধ মানেই ঘুমের ওষুধ এই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল, এই ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সর্বোপরি মনের রোগ কিংবা তার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় উপায় নিজেদের সচেতন হতে হবে। তবেই সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। না হলে শুধু চিকিৎসা করেও নিরাময় সম্ভব নয়।”
