আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদে পড়ে ফের বড়সড় সাইবার প্রতারণার শিকার চিকিৎসক রাজকুমার ভট্টাচার্য। ফেসবুকের একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ বিজ্ঞাপনকে অনুসরণ করে ‘5paisa Capital’–এর নামে তৈরি এক ভুয়ো ট্রেডিং অ্যাপে টাকা ঢালতে গিয়ে শেষমেশ প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা হারালেন চিকিৎসক রাজকুমার ভট্টাচার্য। প্রতারণার এই মামলাটি এবার সিআইডির হাতে, এবং ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে রাজ্য গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
কীভাবে ঘটেছিল প্রতারণা?
তদন্তে জানা গিয়েছে, ফেসবুকে ‘স্টক ইনভেস্টমেন্ট ট্রেনিং’–এর নামে একটি বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে আগ্রহী হন ওই চিকিৎসক। বিজ্ঞাপনটি ক্লিক করতেই তাঁকে যুক্ত করা হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে,। যেখানে ধাপে ধাপে ‘বিশেষজ্ঞ’ সাজিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভুলভাল ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়।
নাগাড়ে দুই মাস ধরে চলতে থাকে লাভের স্বপ্ন দেখানো। কখনও ট্রেডিং স্ক্রিনশট, কখনও কৃত্রিম মুনাফার হিসেব দেখিয়ে চিকিৎসক রাজকুমার ভট্টাচার্যকে বারবার টাকা জমা করতে বলা হয়। শেষমেশ ১০টি পৃথক লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৩৬ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায় ভুয়ো অ্যাকাউন্টে। এরপর গ্রাহক অর্থাৎ চিকিৎসক রাজকুমার ভট্টাচার্য যখন টাকা তুলতে চান, তখনই সামনে আসে আসল চিত্র- দেখা যায় অ্যাপটি সম্পূর্ণ নকল, এবং টাকা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ঘুরিয়ে লোপাট হয়েছে বলই অভিযোগ প্রতারিত চিকিৎসকের।
ঘটনা চলতি বছরের জানুরির। ২৫ জানুয়ারি চিকিৎসক মামলা দায়ের করেন বারাসত সাইবার ক্রাইম থানায়। পরবর্তীতে এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গাতে নেয় রাজ্যে গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে উঠে আসে পাঁচজনের নাম যার মধ্যে একজন অসমের কামরূপের বাসিন্দা।
ধৃতদের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একনজরে ধৃতদের তালিকা:
১. দেবাশিস রায়কে। ৭ মার্চ কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয় ৷
২. প্রসেনজিৎ রঞ্জন নাথ। আলিপুর থেকে গ্রেপ্তার ২৫ জুন।
৩. অমিত ঘোষ। গার্ডেনরিচ থেকে গ্রেফতার করা হয় ১০ জুলাই।
৪. রেয়াজ আহমেদ। ২৩ জুলাই গার্ডেনরিচ থেকে গ্রেফতার।
৫. জহিরুল ইসলাম। অসমের কামরূপ জেলার দিসপুর থানার অন্তর্গত জাতিয়া কাহিলপাড়া এলাকা থেকে ২৬ নভেম্বর গ্রেপ্তার।
আরও বড় চক্রের সন্ধানে তল্লাশি
সিআইডি-র অনুমান, এটা কেবল ‘ফ্রন্ট-এন্ড’ দল নয়, এর নেপথ্যে আরও বড় একটি আন্তরাজ্য সাইবার প্রতারণা চক্র কাজ করছে। টাকা কোন কোন অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, কোথায় কোথায় লগ্নি করা হয়েছে, এবং কারা এর ‘মাস্টারমাইন্ড’ তা ধরতে চলছে জোরদার তল্লাশি। ডিজিটাল লেনদেনের রেকর্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ট্রেস, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা রূপান্তরের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আর্থিক সম্পদ ও ডিজিটাল অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
