শরীরের ফ্যাট দুই ধরনের হয়—সাবকুটেনিয়াস ফ্যাট এবং ভিসেরাল ফ্যাট। সাবকুটেনিয়াস ফ্যাট ত্বকের নিচে থাকে এবং এক ধরনের কুশনের কাজ করে, কিন্তু ভিসেরাল ফ্যাট পেটের চারদিকে স্তর তৈরি করে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকেই মনে করেন পেটের ফ্যাট তেমন কোনও ক্ষতি করে না, কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য হল—এই ফ্যাট খুবই বিপজ্জনক এবং ধীরে ধীরে শরীরকে ভিতর থেকে দুর্বল করতে শুরু করে। পেটের ফ্যাট মেটাবলিক ক্রনিক ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যা হার্ট, কিডনি, লিভার-সহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতে অধিকাংশ মানুষেরই সমস্যা হচ্ছে এই পেটের চর্বি। তাই তা কমানো খুবই জরুরি। তবে এটি কমানো কোনও জাদুর মতো সহজ নয়। ডায়েটে পরিবর্তন আনা, নিয়মিত ব্যায়াম করা—সব দিক থেকেই চেষ্টা করতে হয়।
দারচিনি ভেজানো জল—এক ‘ম্যাজিক ওয়াটার’
দারচিনি ভেজানো পেটের ফ্যাট কমানোর জন্য একপ্রকার ‘জাদুকরী জল’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়মিত দারচিনির জল পান করলে পেটের চর্বি জমার ঝুঁকি কমে এবং জমে থাকা চর্বি গলতেও সাহায্য করে। দারচিনির জলে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে চর্বি থেকে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াও দ্রুত হয়। দারচিনিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর প্রদাহজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
উচ্চ ক্যালোরি বা উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে কোষের ক্ষতি হয় এবং সেখানে প্রদাহ তৈরি হতে থাকে। দারচিনির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। দারচিনির জলে মধু মিশিয়ে খেলে এর কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়। মধুর প্রাকৃতিক শর্করা মেটাবলিজমকে দ্রুত করে, ফলে শরীর দ্রুত চর্বি পোড়াতে পারে। মধু খিদে কমায়। এবং রাতে লেপ্টিন–ঘ্রেলিন হরমোনের কারণে যে খিদের অনুভূতি তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
এই ‘ম্যাজিক ওয়াটার’ তৈরির পদ্ধতি
এই পানীয় বানানো খুব সহজ। রাতে এক গ্লাস জলে একটি দারচিনির টুকরো ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই জল ভাল ভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে তাতে মধু মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন।
অন্য উপায় হল—একটি পাত্রে দু’গ্লাস জল নিয়ে দারচিনি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে জল ফুটিয়ে ২০ শতাংশের মতো অংশ বাষ্প হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন, ছেঁকে নিন এবং মধু মিশিয়ে পান করুন। চাইলে তাতে লেবুর রসও দিতে পারেন।
এভাবেই তৈরি হবে আপনার ‘ম্যাজিক ওয়াটার’। প্রতিদিন সকাল বা রাতে খালি পেটে এটি পান করুন। কয়েক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন টের পাবেন। দারচিনি এবং মধুর যৌথ উপাদান দ্রুত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে, যা পেটের চর্বি কমাতে কার্যকর হতে পারে। পাশাপাশি এই জল হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস বা পেট ফুলে যাওয়ার (ব্লোটিং) সমস্যাও কমাতে পারে।
