আজকাল ওয়েবডেস্ক: সূর্য শুধু আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র নয়, এটি পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের মূল কারণ। এর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ গ্রহগুলোকে কক্ষপথে ধরে রাখে, আর এর আলো ও তাপ পৃথিবীর জলবায়ু ও জীবমণ্ডলের প্রাণশক্তি যোগায়। কিন্তু যদি কোনও এক মুহূর্তে সূর্য হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়? এর পরিণতি হবে তাত্ক্ষণিক, ভয়াবহ এবং অকল্পনীয়।


সূর্যের বিশাল ভরই সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহকে তাদের কক্ষপথে স্থিত রাখে। যদি সূর্য হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়, পৃথিবীর ওপর থেকে সেই মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বিলীন হবে। তখন পৃথিবী আর সূর্যের চারদিকে ঘুরবে না, বরং বর্তমান কক্ষপথের স্পর্শক বরাবর এক সরল রেখায় ছুটে বেরিয়ে পড়বে। এক অনন্ত যাত্রায়, মহাকাশের অন্ধকারে ভেসে যেতে থাকবে। চাঁদ অবশ্য পৃথিবীর সঙ্গে থাকবে, কারণ সে পৃথিবীর মহাকর্ষে বাঁধা, কিন্তু সৌরজগতের নিখুঁত ছন্দ মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে।


তবে পৃথিবীবাসী সঙ্গে সঙ্গে তা টের পাবে না। কারণ সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় আট মিনিট সময় লাগে। সেই সময়টুকু পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক মনে হবে। সূর্য আলো দেবে, আকাশ উজ্জ্বল থাকবে কিন্তু ঠিক আট মিনিট পর, শেষ আলোকরশ্মিটি পৃথিবীতে এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যাবে। দিনের আলো হঠাৎ নিভে যাবে, আর পৃথিবী তৎক্ষণাৎ গভীর রাত্রিতে ডুবে যাবে। 

আরও পড়ুন: দীপাবলির আগে চাঙ্গা হল বাজার, চওড়া হাসি বিনিয়োগকারীদের মুখে


সূর্যের তাপ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত নামতে শুরু করবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই গড় তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে –৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মহাসাগরের উপরিভাগ থেকে বরফ জমা শুরু হবে। যদিও সমুদ্রের বিপুল তাপধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ হিমায়িত হতে অনেক সময় নেবে। হয়তো কয়েক লক্ষ বছর। তবুও, বরফের নিচে কিছু জল কিছুদিন তরল অবস্থায় থাকতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠতল এক নিষ্প্রাণ বরফময় মরুভূমিতে পরিণত হবে।


সূর্যের আলো না থাকায় ফটোসিন্থেসিস সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে। উদ্ভিদ ও শৈবালের খাদ্য উৎপাদন থেমে যাবে, ফলে খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। কয়েক দিনের মধ্যেই উদ্ভিদ মারা যাবে, তারপর তৃণভোজীরা, তারপর মাংসভোজীরা। মানুষ হয়তো কিছুদিন টিকে থাকবে কৃত্রিম আলো, তাপ এবং সংরক্ষিত খাদ্যের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু সূর্যের শক্তি ছাড়া সভ্যতা টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।


তবুও, পৃথিবীর অন্তর্গত তাপ, অর্থাৎ কেন্দ্রের গলিত লাভা এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের শক্তি, বিলিয়ন বছর ধরে বিদ্যমান থাকবে। সমুদ্রের তলদেশে থাকা হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট–এর আশেপাশে কিছু জীব, যারা সূর্যালোক ছাড়াই টিকে থাকে, তারা হয়তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে। মানুষও হয়তো পারমাণবিক শক্তি বা ভবিষ্যতের ফিউশন এনার্জির সাহায্যে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তবে তার জন্য প্রযুক্তি এবং অভিযোজনের এমন মাত্রা প্রয়োজন যা বর্তমান মানবজাতির নাগালের বাইরে।


পৃথিবী মহাকাশে ভেসে যেতে যেতে হয়তো কোটি কোটি বছর পরে কোনও অন্য নক্ষত্রের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং তার মহাকর্ষে ধরা পড়তে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ, এবং সেই সময়সীমা মানব ইতিহাসের তুলনায় অসীম দীর্ঘ। বাস্তবে, পৃথিবী এক ‘রোগ প্ল্যানেট’–এ পরিণত হবে — ঠান্ডা, অন্ধকার ও নিঃসঙ্গ।


সূর্য শুধু আকাশের আলো নয় এটি পৃথিবীর জীবনের ভিত্তি। যদি এটি হারিয়ে যায়, তবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়বে আমাদের জলবায়ু, জীবমণ্ডল ও মানব সভ্যতার ভিত্তি। তবে সৌভাগ্যবশত, বিজ্ঞান বলছে সূর্যের এমন অন্তর্ধান এখনই ঘটছে না, অন্তত কয়েক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত। তাই হঠাৎ করে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।