আজকাল ওয়েবডেস্ক: হোয়াইট হাউসের অদূরে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর একজন আফগান নাগরিকের গুলিবর্ষণের ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে আমেরিকার অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হবে। উদ্দেশ্য, মার্কিন প্রশাসন ও অভিবাসন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করা। এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। চাকরি, উচ্চশিক্ষা কিংবা রাজনৈতিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে মার্কিন মুলুকে যেতে ইচ্ছুক কয়েক কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে দাবি করেছেন, আমেরিকা প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হলেও বছরের পর বছর ঢিলেঢালা অভিবাসন নীতি সেই অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে থামিয়ে দেব। বাইডেনের সময়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করা লাখো মানুষকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্পদ নয়, যারা আমাদের দেশকে ভালবাসতে অক্ষম, যারা দেশের নিরাপত্তা বা উন্নতির জন্য হুমকি—তাদের জন্য এখানে কোনও জায়গা থাকবে না।” এমনকি পশ্চিমি সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকারক ব্যক্তিদের দেশ থেকে বার করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকির ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশ। কিন্তু, কোন কোন দেশ এই তৃতীয় বিশ্বের তালিকায় পড়ে। কীভাবে ওই দেশগুলিকে তৃতীয় বিশ্বের তালিকায় ফেলা হল। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিশ্বের ধারণাটি ঠান্ডা যুদ্ধ থেকে এসেছে। যখন বিশ্ব মার্কিন-জোটবদ্ধ পশ্চিম ব্লক এবং কমিউনিস্ট পূর্ব ব্লকের মধ্যে বিভক্ত ছিল। নিরপেক্ষ এবং বাকি দেশগুলি তৃতীয় বিশ্ব হিসাবে গোষ্ঠীভুক্ত ছিল। প্রায়শই দরিদ্র বা ‘অনুন্নত’ দেশগুলিকে বর্ণনা করতে তৃতীয় বিশ্ব শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়। যদিও এই শব্দবন্ধের এখন কোনও সারবত্তা নেই এবং এটি বেশ পুরনো।
প্রথম বিশ্ব বলতে আমেরিকার সঙ্গে জোটবদ্ধ গণতান্ত্রিক, শিল্পোন্নত দেশগুলিকে বোঝানো হত। দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে শ্রমিক ও কৃষকদের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট-সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে বোঝানো হত এবং তৃতীয় বিশ্ব বলতে এই দুই ব্লকের বাইরের বেশিরভাগ দেশকেই বোঝাত।
প্রথম বিশ্বে উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। পশ্চিমি সম্পর্কের কারণে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান অঞ্চলকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যেমন, স্পেনের অধীনে পশ্চিম সাহারা, বর্ণবাদ-যুগের দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা (নামিবিয়া)। অন্যদিকে, অ্যাঙ্গোলা এবং মোজাম্বিক ১৯৭৫ সালে কমিউনিস্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত পর্তুগিজশাসিত ছিল। সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলিকেও কার্যকরভাবে প্রথম বিশ্ব হিসেবে বিবেচনা করা হত।
দ্বিতীয় বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপ, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়া এবং বলকান-সহ, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ার মতো চীনের সঙ্গে যুক্ত এশীয় কমিউনিস্ট দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে অন্যান্য সমস্ত দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে মূলত অনুন্নত কৃষিপ্রধান রাষ্ট্রগুলি।
ট্রাম্প প্রশাসন ২৮ নভেম্বর জানিয়েছে যে তারা আফগানিস্তান এবং অন্যান্য ১৮টি দেশের প্রতিটি স্থায়ী বাসিন্দা বা ‘গ্রিন কার্ড’ ধারকের অভিবাসন অবস্থা পর্যালোচনা করবে। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS) এর পরিচালক জোসেফ এডলো এক্স-এ লিখেছেন, “@POTUS এর নির্দেশে, আমি প্রতিটি উদ্বেগজনক দেশ থেকে প্রতিটি এলিয়েনের জন্য প্রতিটি গ্রিন কার্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ, কঠোর পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছি।”
এডলো কোন দেশগুলোর কথা বলতে চাইছেন জানতে চাইলে, ইউএসসিআইএসের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেন যে, ট্রাম্পের জুন ২০২৫ সালের আদেশে এই তালিকাটি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেখানে ১৯টি দেশকে ‘চিন্তিত উদ্বেগের’ দেশ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
এই আদেশে আফগানিস্তান-সহ ১২টি দেশের প্রায় সকল নাগরিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলি হল আফগানিস্তান, মায়ানমার, চাদ, কঙ্গো-ব্রাজাভিল, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন। ট্রাম্প আরও সাতটি দেশের ভ্রমণকারীদের উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সেগুলি হল, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা।
